
কলকাতা: মায়ের সঙ্গে মামাদাদুর অবৈধ সম্পর্ক! আর তা জেনে ফেলাতেই নৃশংসভাবে খুন হতে হল নাবালক নাতি ও সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাতনিকে। অভিযুক্ত স্বয়ং মামাদাদু স্বপন বসাক। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই সন্দেহ করেছিল পুলিস। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মোড় ঘুরল ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার’। জোড়া খুনের অভিযোগে মামাদাদুকে উত্তর দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করল নেতাজিনগর থানার পুলিস।
নেতাজিনগরের ২/৪৫, শ্রীপল্লিতে দোতলা বাড়ির একতলার একটি ঘর। সেখানেই ভাড়া থাকতেন শচীনকুমার দাস ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নমিতা বসাক (১৯)। দু’দিন আগে দিদির কাছে বেড়াতে এসেছিল নমিতার ভাই শিবা বসাক (৭)। ১০ এপ্রিল ওই ঘরে অগ্নিকাণ্ড থেকে ঘটনার সূত্রপাত। দুপুর ১২টা নাগাদ আগুন লাগে। তখন শচীনবাবু বাড়িতে ছিলেন না। ঘরের বাইরেই খেলছিল তাঁর কিশোর শ্যালক। তখন ঘরের মধ্যে ছিলেন নমিতা। দিদিকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে পুড়ে যায় ওই কিশোরও। তার আর্তনাদ শুনে পড়শিরা ছুটে আসেন। তাঁরাই জল দিয়ে আগুন নেভান। নাবালককে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে। পাঁচদিন পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় অগ্নিদগ্ধ নাবালক নাতিরও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নেতাজিনগর থানার পুলিস।
তদন্তকারীরা দেখেন, ঘরের
মধ্যে ১০০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন নমিতা। বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল
হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়
পুলিস। তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য পান তদন্তকারীরা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
জানান, নমিতার মাথায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। কিন্তু, তা মাথার ভিতরে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ইন্টারনাল হেমারেজ’। মোড় নেয় তদন্ত। শুরু হয় মৃতের
পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ। তখনই মৃতের মামাতো দাদুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ
করেন শচীনবাবু। কিন্তু, মামাদাদুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ কেন? পুলিসি
প্রশ্নের জবাবে অভিযোগকারী জানান, মৃতার মায়ের সঙ্গে মামাতো দাদুর অবৈধ
সম্পর্ক ছিল। মাস দেড়েক আগে তা জেনে ফেলেন অন্তঃসত্ত্বা। তখনই নাতনিকে
খুনের পরিকল্পনা করেন স্বপন বসাক। অগ্নিকাণ্ডের দিনও সকাল ১০টা নাগাদ
বাড়িতে আসেন মামাতো দাদু। তখনও নমিতার সঙ্গে বচসা হয়।
এই অভিযোগের
ভিত্তিতেই তদন্তে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ
করেন তদন্তকারীরা। দেখা যায়, সকালের পর দুপুরেও শ্রীপল্লির বাড়িতে
গিয়েছিলেন অভিযুক্ত মামাদাদু। কিছুক্ষণ পরেই তাঁকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
তার মধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ওই বাড়িতে। এরপরেই উত্তর দিনাজপুরের
রায়গঞ্জে পালিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে নেপালে গিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার
পরিকল্পনা ছিল অভিযুক্তের। সেই ছক ভেস্তে দিয়ে স্বপন বসাককে পাকড়াও করে
পুলিস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন