
কলকাতা: ‘শিক্ষকদের চাকরি ফেরানোর দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারের উপরে ভরসা রেখে স্কুলে ফিরুন। কারও বেতন বন্ধ হবে না।’ মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সভা থেকে এভাবেই আন্দোলনরত শিক্ষকদের স্কুলে ফেরার আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এদিনই সন্ধ্যায় এসএসসি’র তৈরি করা সংশোধিত ‘যোগ্য’ শিক্ষক তালিকা ডিআইদের উদ্দেশে পাঠাল স্কুলশিক্ষা দপ্তর। সূত্রের খবর, তাতে ১৫ হাজার ৪০৩ শিক্ষকের তালিকা রয়েছে। এর ভিত্তিতেই কাজে ফেরা এবং বেতনের প্রক্রিয়া চলবে। এতে আংশিক সন্তুষ্ট হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন শিক্ষকরা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আবেদন করেন, গরমের
মধ্যে কষ্ট করে যেন তাঁরা বসে না থাকেন। সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে বলেই রিভিউ
পিটিশনে গিয়ে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি এ বছরের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিক্ষাকর্মীদের বিষয়টিও রিভিউ করার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা চলছে। তিনি
বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি চাইতে পারি না যে, রাজ্যে বেকার বাড়ুক।
মামলাবাজ বিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে দানবিক মুখ দেখাচ্ছে।’ আন্দোলনকারীদের
তিনি মনে করিয়ে দেন, যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা নিয়ে তাঁদের ব্যতিব্যস্ত
হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা সরকার এবং আদালত বুঝবে। তিনি এও মনে করান,
উত্তরপ্রদেশে ৬৯ হাজার এবং ত্রিপুরায় ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে।
বিজেপিশাসিত এই রাজ্যগুলিতে চাকরি ফিরে পাওয়া দূরঅস্ত, উল্টে আন্দোলনে
নেমে মাথায় পুলিসের লাঠি খেতে হয়েছে।
এরপরও অবশ্য আচার্য ভবনের সামনে
পরিস্থিতির বদল হয়নি। সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ঘেরাও হয়ে থাকতে
হয়েছে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে। এদিন তাঁর সঙ্গে আটকে থাকেন
২৫ জন কর্মীও। সোমবার রাতে সিদ্ধার্থবাবুর খাবার, মঙ্গলবার চা-ব্রেকফাস্ট
ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারীরা। যদিও, লাঞ্চ ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়নি। সাংবাদিক
বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন,
‘আন্দোলনে আধিকারিকদের জীবনের ঝুঁকি না তৈরি হয়।’ তিনি এও জানান,
কাউন্সেলিংয়ের দফা ধরে যে শিক্ষক তালিকা প্রকাশের কথা বলা হচ্ছিল, তা ঠিক
নয়। সরকার একথা বলেনি। তবে, আইনি কারণেই তালিকা প্রকাশ করা হবে না। তিনি
আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানান, রিভিউ পিটিশন দুর্বল হয়, এমন কাজ করতে
সরকারকে বাধ্য করবেন না।
বিকেলে ছ’জনের একটি শিক্ষক প্রতিনিধি দল
চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ইতিমধ্যে ডিআইদের কাছে তালিকা পাঠানোর
একটি বিজ্ঞপ্তি আসে স্কুল শিক্ষা কমিশনারের তরফে। তাতে লেখা ছিল, অযোগ্য
বলে চিহ্নিত করা যায়নি এমন শিক্ষকদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে ডিআইদের কাছে।
তাঁরা স্কুলগুলিকে সেই তালিকা পাঠাবেন। তার ভিত্তিতে শিক্ষকরা যেন কাজে
যোগ দেন। এর ভিত্তিতে বেতন সংক্রান্ত সঙ্কটও কাটতে পারে। আলোচনার পরে
আন্দোলনকারী চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘১৫ হাজার ৪০৩ জনের তালিকা পাঠানো হচ্ছে।’
রাতেই ডিআইদের হাতে তালিকা পৌঁছে যায় বলে খবর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন