নয়াদিল্লি: বাঙালি যুবকের রুশ স্ত্রী যেন কোনওভাবেই ভারত ছেড়ে পালাতে না পারে। বাজেয়াপ্ত করতে হবে পাসপোর্টও। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। রাশিয়ার নাগরিক ভিক্টোরিয়া জিগালিনাকে ধরতে বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে ‘লুকআউট নোটিস’ জারির নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ কড়া ভাষায় জানিয়ে দিল, দিল্লির পুলিস কমিশনার, ডেপুটি পুলিস কমিশনার, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির এসএইচও নিজেরা বিষয়টি দেখবেন। খুঁজে বের করতে হবে ছোট্ট স্তাভ্য বসুকে। আজ ফের মামলার শুনানি।
ঘটনা হল, চন্দননগরের আদি বাসিন্দা শিলং আইআইএম থেকে পাশ সৈকত বসু কর্মসূত্রে চীনে ছিলেন। সেখানেই আলাপ হয় ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে। ২০১৭ সালে বিয়ে। দু’বছর পর ভারতে ফিরে আসেন দুজনেই। সৈকতবাবু বর্তমানে দিল্লিতে এমএসএমই মন্ত্রকের পরামর্শদাতা হিসেব কাজ করেন। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মায় স্তাভ্য। যদিও সৈকতবাবুর অভিযোগ, ভিক্টোরিয়া প্রাণপণ চেয়েছিল যাতে সন্তান রাশিয়ায় জন্মায়। কিন্তু সায় দেয়নি সৈকতের পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, ভিক্টোরিয়া রাশিয়ার চর। ভিক্টোরিয়ার বাবা রাশিয়ার স্পাই এজেন্সি এফএসবি’তে কাজ করতেন। ভারতীয় পরিবারকে ঠকানো হয়েছে বলেই অভিযোগ।
তাই সুপ্রিম কোর্টে মামলা ওঠে। ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ মাসে। চলতি বছরের ২২ মে সুপ্রিম কোর্ট বাচ্চার অধিকার ঠিক করে দিয়ে নির্দেশ দেয়, সোম থেকে বুধ স্তাভ্য থাকবে মা ভিক্টোরিয়ায় কাছে। বৃহস্পতি থেকে রবিবার বাবা সৈকতের সঙ্গে। বাবা থাকেন দিল্লির লাজপত নগর। মা ভিক্টোরিয়া ডিফেন্স কলোনি। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল থেকে ভিক্টোরিয়া এবং স্তাভ্য নিখোঁজ। সৈকতবাবুর আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক সুপ্রিম কোর্টে জানান, মা-ছেলেকে শেষ দেখা গিয়েছিল গত ৪ এপ্রিল। দিল্লিতে রাশিয়ান দূতাবাসের পিছনের দরজা দিয়ে এক রাশিয়ান ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে ঢুকছেন ভিক্টোরিয়া এবং স্তাভ্য।
এদিনের শুনানিতে এদিন শুনানিতে বিচারপতি সূর্য কান্ত ভিক্টোরিয়ার আইনজীবী অঞ্জনীকুমার মিশ্রের কাছে জানতে চান, ‘কোথায় গেল ওরা?’ উত্তরে তিনি জানান, ‘জানি না। খোঁজ নেই।’ একই কথা বলেন ভিক্টোরিয়ার অন্য আইনজীবীরাও। যা শুনে ভিক্টোরিয়ার আইনজীবীদের বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘ব্যাপারটা কী বলুন তো? আপনাদের মক্কেল কোথায় সেটাই বলতে পারছেন না! আমাদের তো সন্দেহ হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে আর নয়। নাবালক স্তাভ্যকে খুঁজে বের করতেই হবে।’ তাই কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে এখনই দু’দেশ সম্পর্কে কিছু বলছি না। তবে আইন আইনের পথে চলবে। রাশিয়ান ডিপ্লোম্যাটের বাড়িতেও পুলিস তল্লাশি করবে। সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়াতে হবে। রুশ মহিলা ভিক্টোরিয়াকে কোনওভাবেই ভারত ছাড়তে দেওয়া যাবে না। আটকাতে হবে নাবালককেও।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন