কলকাতা: কলহ, বিবাদ, ভুল বোঝাবুঝি আর সন্দেহের বিষে বিষিয়ে উঠছে হাজারও দাম্পত্য সম্পর্ক। স্বামী বা স্ত্রী, কারও না কারও তরফে বিচ্ছেদ চেয়ে নিত্যদিন দায়ের হচ্ছে মামলা। নিম্ন আদালত হোক বা হাইকোর্ট—বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার বহর নেহাত কম নয়। তবে কে না জানে, জীবনের বাস্তবতা কখনও কখনও হার মানায় জমজমাট উপন্যাসের নাটকীয়তাকেও। তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দরজায় কড়া নাড়ার বহু বছর পর আমূল বদলে গেল এক দম্পতির সম্পর্কের রসায়ন! বিচ্ছেদ নয়, উত্তর ২৪ পরগনার ওই দম্পতি এখন ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
২০০৭ সালের নভেম্বরে বিয়ে হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা সুভাষ কর্মকার (নাম পরিবর্তিত) ও লাবণী কর্মকারের (নাম পরিবর্তিত)। সুভাষবাবুর অভিযোগ ছিল, বিয়ের মাসখানেক পর থেকেই স্ত্রী তাঁর বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে ঝামেলা শুরু করেন। চার মাসের মাথায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান স্ত্রী। সুভাষবাবুকে ঘরজামাই থাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন লাবণী ও তাঁর মা। তিনি রাজি হননি। পরে তিনি জানতে পারেন, লাবণী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সুভাষবাবুর অভিযোগ, এরপর একাধিকবার লাবণীর বাপের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। এর মাঝেই একদিন কাজ থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, তিনি যেন শ্বশুরবাড়ির দিকে আর না যান। ওই ঘটনার পর সেখানে যাননি সুভাষ। পরবর্তী সময়ে তিনি জানতে পারেন, অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই থাকছেন লাবণী। এই অবস্থায় ২০১৫ সালে নিম্ন আদালতে বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন সুভাষবাবু। যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাইয়ের পর ২০২৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের পক্ষেই রায় দেয় বারাকপুর নিম্ন আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন লাবণী।
ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন পর স্বামীর সঙ্গে চোখাচোখি হতেই সবকিছু যেন পাল্টে যায়! এতদিনের ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে সম্মত হন স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই। ঘটনা হল, তিক্ত সম্পর্ক থেকে নিষ্কৃতি পেতে একবার আদালতের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়লে সহজে আর নিস্তার মেলে না! মাঝপথে চাইলেই সব ঝেড়ে ফেলে এক হওয়া সহজ নয়! বিচ্ছেদ হওয়ার পর কোনও দম্পতি যদি ফের গাঁটছড়া বাঁধতে চান, সেক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন যাবতীয় বিবাদ ভুলে কোনও দম্পতি ফের স্বামী-স্ত্রী হতে চাইলে তা সম্ভব নয়। তখন মামলাই একমাত্র পথ। তাই ফের গাঁটছড়া বাধতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুভাষ-লাবণী।
তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে ভাঙা সম্পর্ক আইনিভাবে জুড়তে সিলমোহর দিয়েছে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন