কৃষ্ণনগর: ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদ পেতে প্রতারণার টাকা তোলা হচ্ছে দুবাই থেকেও। সেখানকার স্থানীয় কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে এরাজ্যের প্রতারিতদের টাকা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেও সেই টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারকরা। প্রতারণার কোটি কোটি টাকা দেশ ছাড়াও বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও পোঁছে যাচ্ছে। ভুয়ো ডিজিটাল অ্যারেস্ট দেখিয়ে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক দেখে চক্ষু চড়কগাছ গোয়েন্দাদের। প্রতারকদের ফোন নম্বরের আইপি অ্যাড্রেস চেক করলে, তা পাওয়া যাচ্ছে কম্বোডিয়া কিংবা ভিয়েতনামের কোনও দেশের। স্বাভাবিকভাবেই ওই প্রতারকদের শিকড় খোঁজাই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
সম্প্রতি নদীয়া জেলার নবদ্বীপের এক মহিলা ভুয়ো ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে তাঁকে দু’কোটি টাকা খোয়াতে হয়। যদিও এই ঘটনার তদন্তে নেমে সাফল্য পেয়েছে কৃষ্ণনগর পুলিস জেলা। ৫২ লক্ষ টাকা ফেরানো হয়েছে ওই মহিলাকে। প্রতারিতদের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়া ওই বিপুল পরিমাণ টাকা ফেরত পাওয়ার ঘটনা খুবই নগন্য। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ভুয়ো ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই ৫২ লক্ষ টাকা ফেরানো গিয়েছে। সাধারণ মানুষকে এনিয়ে সচেতন থাকতে হবে। তাঁরা যত দ্রুত আমাদের কাছে আসতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি টাকা ফেরানো সম্ভব হবে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসের শেষের দিকে নবদ্বীপের বাসিন্দা নিধি সাচনা ভাল্লাইল ভুয়ো ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে পড়েন। তাঁর আদি বাড়ি কেরলে। হঠাৎ তাঁর কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। পরিচয় দেয় মুম্বই পুলিস বলে। ফোনে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ে একটি গুরুতর মামলার তদন্ত চলছে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। এরপরই ভয় পেয়ে যান নিধিদেবী। প্রতারকরা ‘অফার’ দেয়, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাঠালে তাঁকে আর গ্রেপ্তার করা হবে না। প্রতারকদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান নিধিদেবী। এরপর গত ২৭ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতারকদের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা পাঠান তিনি। এইভাবে প্রায় দু’কোটি টাকা পাঠানোর পর নিধিদেবী শেষমেশ বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারপর ২৪ জুন তিনি কৃষ্ণনগর সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সাইবার পুলিস।
তদন্তে নেমে পুলিস এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে বাকি প্রায় দেড় কোটি টাকা উদ্ধার আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, বাকি দেড় কোটি টাকা পাঁচটির বেশি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন নিধিদেবী। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক রাজ্যে। এমনকী দুবাইয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও প্রতারণার টাকা রয়েছে। যদিও তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, এগুলি সবই মিউল তথা ভাড়া করা অ্যাকাউন্ট। ফলে প্রতারকদের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাধারণত একটি ফোন নম্বর থেকে প্রতারকরা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই নম্বর ট্রেস করে দেখা যাচ্ছে, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনও দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন