পাটনা: বেসরকারি হাসপাতাল। ঝা-চকচকে ফ্লোর। দু’পাশে সারি দেওয়া কেবিন। হঠাৎই একটি কেবিনের সামনে পৌঁছল পাঁচজন। পেটের কাছে বা কোমরে গোঁজা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। একটি কেবিনের সামনে আসতেই সাদার উপর প্রিন্টেড জামা পরা একজন বন্দুক বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। পিছন পিছন আরও চারজন। তারপরই এলোপাথাড়ি গুলি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ম্যাগাজিন খালি করে বেরিয়ে এল শ্যুটাররা। তারপর কিছুটা দৌড়ে লিফটে পৌঁছে গেল। আর প্রথমে যে দুষ্কৃতী কেবিনে ঢুকেছিল, সে কার্যত হেলতে দুলতে বেরিয়ে আসে। হাড়হিম করা এই শ্যুটআউট কোনও ক্রাইম থ্রিলার বা ওয়েব সিরিজের অংশ নয়! ঘটনাটি নীতীশ কুমারের বিহারে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর। নাম চন্দন মিশ্র। ডজন খানেক খুনের অভিযোগ জেল খাটছিলেন তিনি। সম্প্রতি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে এনডিএ সরকার।
সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিস কার্তিকেয় শর্মা জানিয়েছেন, পাটনার পারস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বক্সারের বাসিন্দা চন্দন। বিরোধী গ্যাংয়ের সদস্যরা তাঁকে গুলি করে মেরেছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ দুষ্কৃতীকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতালের নিরপত্তারক্ষীরাও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এই ঘটনায় নীতীশ সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন আরজেডি নেতা তথা প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। প্রায়শই লালুপ্রসাদের জমানাকে জঙ্গলরাজের সঙ্গে তুলনা করেছে শাসক শিবির। সেই প্রসঙ্গ টেনে তেজস্বী কটাক্ষ, সরকারি অপরাধীরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে আইসিউতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছে। বিহারে এখন কি কেউই সুরক্ষিত নন? ২০০৫ সালের আগে এমন ঘটনা ঘটেছে? রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় সিনহার পাল্টা সাফাই, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে। দোষীদের ছাড়া হবে না। এরমধ্যে প্রশাসনিক ‘গাফিলতি’ ঢাকতে পরিসংখ্যানকেই হাতিয়ার করেছেন ডিজিপি বিজয় কুমার। তিনি জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৪ সালের তুলনায় অপরাধের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। সেই সময় দিনে গড়ে চারটি করে অপরাধ সংগঠিত হতো। পুলিস-প্রশাসনের তৎপরতায় তা অনেকটাই কমেছে। গত বছর রাজ্যে ২ হাজার ৭০০ খুন হয়েছে। ২০০৪ সালের তুলনায় যা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কম।
বিগত কয়েকদিনে প্রকাশ্য রাস্তায় একাধিক শ্যুটআউটের ঘটনা ঘটেছে। টার্গেট কখনও ব্যবসায়ী, কখনও বিজেপি নেতা কিংবা মহিলা, দোকানদার। বিগত দু’সপ্তাহে নীতীশ কুমারের বিহারে এই চিত্রই গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার পারস হাসপাতালের ঘটনায় তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এরইমধ্যে খাগড়িয়ায় খুন হলেন এক জেডিইউ নেতা। নাম রাজকিশোর নিষাদ। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এই নিয়ে বিগত দু’সপ্তাহে দুষ্কৃতী হামলায় প্রাণ হারালেন অন্তত ৮ জন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন