নয়াদিল্লি ও কলকাতা: জিলিপি, শিঙাড়ার মতো মুখরোচক খাবারও নাকি ধূমপানের মতো ক্ষতিকারক! তামাকজাত দ্রব্যের মতোই এইসব খাবারের ক্ষেত্রে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ জারি করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এমনই একটি নির্দেশিকা ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়িয়েছে যে, এবার তার সাফাইও দিতে হল কেন্দ্রকে। মঙ্গলবার মন্ত্রক জানাল, ভারতীয় স্ন্যাক্স ও বৈচিত্র্যময় স্ট্রিট ফুডকে কোনওভাবেই নিশানা করা হচ্ছে না। কোনও বিশেষ খাবারের কথাও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়নি। তেলজাতীয় এবং যে সব খাবারে বাড়তি চিনি থাকে, সেগুলির ব্যাপারে সতর্ক করার একটা প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। এই নির্দেশিকা নিছকই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে জারি করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মস্থল, কাফে, ক্যান্টিনে বোর্ড বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কোনও নির্দিষ্ট খাবারকে নিশানা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
এর আগে জানা গিয়েছিল, নাগপুর এইমস সহ প্রত্যেক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাতেই নিত্যদিনের ‘স্ন্যাক্স’জাতীয় খাবার নিয়ে বোর্ড ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তাতে থাকবে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ এবং এই সব খাবারের ক্ষতিকারক দিক। স্পষ্ট লিখতে হবে, কোন খাবারে ঠিক কতটা চিনি বা তেল রয়েছে। শিঙাড়া, জিলিপি, বড়া পাও, লাড্ডু, কোল্ড ড্রিঙ্ক, জ্যাম-জুসের মতো সব খাবারই থাকবে এই তালিকায়। মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, খাবারে বাড়তি ফ্যাট ও চিনি নিয়ে সচেতনতা গড়তেই এই উদ্যোগ। দেশে স্থূলত্ব (ওবেসিটি) সমস্যা বাড়ছে। এই বিপদের বিষয়টি প্রতি পদে মনে করিয়ে দিতেই বোর্ড। নির্দেশিকায় এসব খাবারের বিক্রেতাদের সতর্কবার্তা ঝোলাতে বলা হয়নি। আর বিশেষ কোনও খাবারের কথাও বলা হয়নি।
যদিও সাধারণ মানুষ এই ‘সতর্কবার্তা’কে খাদ্যাভ্যাসে ‘হস্তক্ষেপ’ বলেই মনে করেছে এবং শুরু হয়েছে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এমন কোনও নিষেধ এ রাজ্যে মানা হবে না। বাংলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মিষ্টি উদ্যোগের সভাপতি ধীমান দাশের কথায়, ‘যত দোষ ঐতিহ্যবাহী খাবার শিঙাড়া আর জিলিপির! তাদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের? আর শিঙাড়া বা জিলিপি তো রোজ রোজ কেউ খান না। আমরা জানি, কোনও খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। তা সে আলুসেদ্ধ ভাতও হতে পারে। তাছাড়া তেলেভাজা, রোল, এমনকী ফুচকার মতো অনেক খাবারে আলু ও তেল ব্যবহার করা হয়। তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এসব খাবারে শর্করা বা তেলের গুণমানের বাছবিচারেরও বালাই নেই। অথচ ঘিয়ে ভাজা মিষ্টি বা শিঙাড়া তুলনামূলক ভালো।’ ধীমানবাবু জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় সংগঠন থেকে তাঁরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেবেন।
কেন্দ্র অবশ্য দাবি করছে, কোন খাদ্যের মাধ্যমে অজান্তে শরীরে কতটা বেশি চিনি ও ফ্যাট যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এটা একটা সাধারণ নির্দেশিকা মাত্র। এর মধ্যে সব খাবার রয়েছে। কোনও বিশেষ খাবারের কথা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন