নয়াদিল্লি: স্কুলের পাঠ্যবইতেও সঙ্ঘের হস্তক্ষেপ? এবার এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, মোদি সরকার বিরোধী একটি লাইনও যাতে পাঠ্যপুস্তকে না থাকে, তোর জন্য সরকারি স্কুলে বই আতশকাচের নীচে ফেলে দেখছেন সঙ্ঘের কর্তাব্যক্তিরা। সেই কারণেই থমকে রয়েছে এনসিইআরটি’র পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বই প্রকাশ। সেশন শুরু হয়ে গিয়েছে এপ্রিল মাসে। অথচ, জুন মাস পেরিয়ে গেলেও পড়ুয়ারা হাতে পায়নি বই। যদিও শিক্ষামন্ত্রক এই অভিযোগ সাফ অস্বীকার করেছে।
সরকারি স্কুলের জন্য সিলেবাস তৈরি করে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)। গত বছর তৃতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। চলতি বছরে চতুর্থ এবং সপ্তম শ্রেণির নতুন বই। কিন্তু পঞ্চম এবং অষ্টমের হয়নি। বলা হয়েছিল, পঞ্চম শ্রেণির বই ১৫ জুন এবং অষ্টম শ্রেণির ২০ জুনের মধ্যে মিলবে। কিন্তু জুলাই শুরু হয়ে গেলেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ। বইয়ের পিডিএফ ভার্সান সংস্থার ওয়েবসাইটে নেই। সেটা হলেও পড়ুয়ারা ডাউনলোড করে নিতে পারত। এই বিলম্ব কেন? এনসিআরটি’র দাবি, শীঘ্রই মিলবে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি। কিন্তু দু’টি প্রশ্ন এখনও থাকছে—১) পড়ুয়ারা ততদিন কী পড়বে? আর ২) বই প্রকাশে এত দেরি কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিকদের একাংশ বিলম্বের কারণ হিসেবে জানাচ্ছেন, পাঠ্যপুস্তকে কী লেখা হয়েছে, তা ফ্যাকাল্টিরা দেখার পরও যাচাই করছে গেরুয়া শিবির। আরএসএসের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা খুঁটিয়ে দেখছেন, বইতে কেন্দ্রের সরকার বা ‘তাদের বেঁধে দেওয়া ইতিহাসে’র বিরুদ্ধ কোনও অংশ বা লাইন আছে কি না। এনসিইআরটি’র বিশেষজ্ঞরা পাঠ্যপুস্তক তৈরির পরেই তা সোজা ছাপাখানায় যাচ্ছে না। নতুন বই প্রকাশের আগে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য একটি ‘ব্রিজ কোর্সে’র বই এনসিইআরটি ওয়েবসাইটে দিয়েছিল। যাতে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে নতুন বই সম্পর্কে ধারণা হয়। কিন্তু প্রকৃত বই হাতে না পেলে পড়ুয়ারা পড়বে কী? পড়ার প্রতি আগ্রহই বা তৈরি হবে কীভাবে?
এর আগে দ্বাদশ শ্রেণির পলিটিক্যাল সায়েন্সের বই থেকে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার ঘটনায় আরএসএস’কে সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণার অংশটি বাদ দিয়েছিল এনসিইআরটি। পুনের এক ব্রাহ্মণ (নাথুরাম গডসে) গান্ধীজিকে হত্যা করেছিলেন বলে যে অংশ ছিল, বাদ দেওয়া হয় তাও। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, এভাবে ‘জাত’ উল্লেখ করায় আপত্তি জমা পড়েছিল এনসিইআরটি’তে। একইভাবে গত বছর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে অনেকাংশ বদল করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রকের যুক্তি ছিল, ছাত্রছাত্রীদের বোঝা কমাতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু তা বলে বই প্রকাশেও বিলম্ব? সিবিএসই’র সিলেবাস অনুযায়ী বেসরকারি স্কুলগুলি অন্য কোনও প্রকাশনার বই পড়াতেই পারে। কিন্তু সরকারি স্কুলে এনসিইআরটি’র বই পড়াতেই হয়। ফলে বই প্রকাশে বিলম্ব হলে আদতে পড়ুয়ারাই কি পিছিয়ে পড়বে না?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন