কলকাতা: সরকার পরিবর্তন হয়েছে ২০১১ সালে। বামেদের সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সময় বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যকে পাহাড়প্রমাণ দেনায় ডুবিয়ে গিয়েছে বলে মাঝেমধ্যেই ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার দেখা গেল, বাম সরকারের হিসেব না দেওয়ার দায়ও চাপছে বর্তমান সরকারের ঘাড়ে। কারণ, ২০০৩-০৪ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থাকে যে কোটি কোটি টাকা গ্রান্ট-ইন-এইড দেওয়া হয়েছিল, তার খরচের খতিয়ান বা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) জমা পড়েনি এজি বেঙ্গলের কাছে। সূত্রের খবর, কয়েক হাজার কোটি টাকার কোনও হিসেব দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ‘পেন্ডিং’ থাকা এই সমস্ত ইউসি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এজি বেঙ্গলের তরফে নবান্নে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, চিঠি হাতে পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন। গত শুক্রবার অর্থদপ্তরে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছেন অর্থসচিব প্রভাত মিশ্র। বলা হয়েছে, বিষয়টি রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে দপ্তরগুলিকে। পাশাপাশি, দপ্তরগুলিতে এজি বেঙ্গলের পাঠানো চিঠি সহ একটি নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে অর্থদপ্তর। সেই নির্দেশিকায় দপ্তরের অধীনে থাকা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা, যাদের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বকেয়া রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০০৩-০৪ থেকে ২০১০-১১ পর্যন্ত তো বটেই, তার পর থেকে এখন পর্যন্ত যত ইউসি ‘পেন্ডিং’ রয়েছে, তার খতিয়ান তৈরি করে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউসি জমা পড়েনি এমন গ্রান্ট-ইন-এইড-এর অঙ্কটা মাত্রাছাড়া হতে পারে। কারণ, শুধুমাত্র একটি দপ্তরের ক্ষেত্রেই এই অঙ্কটা সাড়ে সাত হাজার কোটিরও বেশি।
মূলত দু’টি খাতে সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থাগুলিকে আর্থিক অনুদান দেয় সরকার। কর্মচারীদের মাইনে দিতে এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন ও প্রকল্প খাতে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সমাজকল্যাণ ও নারী উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ছাড়াও নগরোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত গ্রান্ট-ইন-এইড দিয়ে থাকে রাজ্য। এ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা আইএফএমএস ব্যবস্থাপনা চালু করেছে সরকার। ফলে তারপর থেকে এখন পর্যন্ত হিসেবের খতিয়ান দেওয়া খুব একটা কষ্টকর ব্যাপার হবে না। কিন্তু তার আগের, মূলত বাম আমলের শেষ সাত-আট বছরে ইউসি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যাচাই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে দপ্তরগুলি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন