কলকাতা; রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরপর তিনবার রেপো রেট কমিয়েছে। সেটাও মোট এক শতাংশ। মোদি সরকার তথা আরবিআইয়ের দাবি ছিল, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। তাই এই সিদ্ধান্ত। আশা ছিল, এই সিদ্ধান্তের সুফল পাবে মধ্যবিত্ত। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার কমতে পারে। কিন্তু একইসঙ্গে ঋণের কিস্তিও কমবে। মানুষ আরও ঋণ নেবে গাড়ির জন্য, বাড়ির জন্য। তার উপর বাজারে চাহিদা বাড়াতে মানুষ যাতে বেশি পরিমাণে পণ্য ও পরিষেবায় খরচ করে, সেজন্য আয়করে বড় ছাড় ঘোষণাও হয়েছিল। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তথ্য বলছে, সুদের হার কমেছে। কিন্তু ঋণ ও আমানতের বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। অর্থাৎ, মূল্যবৃদ্ধির আঁচে এখনও বিপর্যস্ত আম জনতা। তাদের হাতে সঞ্চয় করার মতো টাকা নেই। নতুন কাঠামোয় আয়করেও হোম লোনের মতো বিনিয়োগের জন্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ঋণের বোঝা কাঁধে নিতে তীব্র অনীহা দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তের মধ্যে।
শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত—বুক ফুলিয়ে দাবি করে আসছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও যে খুব ভালো, সেকথা বলছে না ব্যাঙ্ক ঋণ ও আমানতের বাজার। সেই কারণে এর আগের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মোদি সরকারের বিপুল চাপ সত্ত্বেও রেপো রেট কমাননি। তাঁর মেয়াদ শেষ হতেই গভর্নরের আসনে বসেন সঞ্জয় মালহোত্রা। এবং দফায় দফায় রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত। রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় সিলিন্ডার পিছু ৫০ টাকা বেড়ে যাওয়া, ৭৫০টি ওষুধের দাম বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির আঁচে শহুরে ক্রয় প্রবণতা কমা—কোনও কিছুই রেপো কমানোর সিদ্ধান্তে বাধা হতে পারেনি। কিন্তু তারপর কী হয়েছে? ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ‘কেয়ার এজ’ জানাচ্ছে, গত ২৭ জুন শেষ হওয়া পাক্ষিকে দেশে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৫ লক্ষ কোটি টাকায়। ঋণ বৃদ্ধির হার ৯.৫%। গত বছর ওই সময় যা ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। সংস্থাটির দাবি, সাধারণত এপ্রিল এবং মে’তে সাধারণত ঋণের বাজার ভালো থাকে না। কিন্তু জুন মাসেও তা মার খেয়েছে, যা উদ্বেগের। গত ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরে ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশ। সেখান থেকে তা তলানিতে নেমেছে। কারণ, মানুষ গাড়ি-বাড়ির মতো ঋণ কম নিয়েছেন। শিল্প সংস্থাগুলি পর্যন্ত ব্যবসার সম্প্রসারণ বন্ধ রেখেছে।
উল্টোদিকে দেশের জমার অঙ্ক পৌঁছেছে ২৩৪ লক্ষ কোটি টাকায়। এক বছরে বৃদ্ধির হার ১০.১ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় আধ শতাংশ বেশি। সাধারণ মানুষ ফিক্সড ডিপোজিট বাবদ যা জমা করেন, তা এক বছরের নিরিখে ৩ শতাংশ কমেছে বলে দাবি ‘কেয়ার এজ’-এর।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, ‘আমানত কমার কারণ মূলত দু’টি। এক, সাধারণ মানুষের রোজগার বাড়ছে না। তাই সঞ্চয় বাড়ছে না। দুই, সুদ কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সঞ্চয় থেকে সরে আসছেন। সেই টাকা অন্যত্র খরচ বা বিনিয়োগ করছেন।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘রেপো এবং তার হাত ধরে ব্যাঙ্কের সুদের হার কমলে শিল্প সংস্থাগুলির বোঝা কমে। মুনাফা বাড়ে। সংস্থা লাভবান হলে, শেয়ার বাজারে তার সদর্থক প্রভাব পড়ে। শেয়ার বাজার বর্তমানে চাঙ্গা থাকা এর অন্যতম কারণ।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন