প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ অ্যাখ্যা: সরানো হল ২ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে - Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Breaking

Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Aaj Bikel is currently West Bengal's leading, popular, authentic and trustworthy digital media. Aaj Bikel News has become the voice of crores of readers and viewers.

শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ অ্যাখ্যা: সরানো হল ২ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে



তমলুক: ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে উল্লেখ করার ঘটনায় দু’জনকে আধিকারিককে সরিয়ে দিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে সাংবাদিক বৈঠক করেন উপাচার্য দীপক কর। গোটা ঘটনায় মর্মাহত তিনি। চেয়ে নেন ক্ষমাও। এধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে সিরিয়াসভাবেই নেওয়া হয়েছে বলে দাবি উপাচার্যের। সেইসঙ্গে তিনি প্রশ্নপত্র তৈরি ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওই দুই আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানা। উপাচার্য এদিন বলেন, ‘আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান এবং প্রশ্নপত্রের মডারেটরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। অপরজন কলেজের অধ্যাপক। গোটা ঘটনায় তাঁদের গাফিলতির বিষয়টি সামনে এসেছে। তাই এই পদক্ষেপ।’ 

বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সেমেস্টারের ইতিহাস পরীক্ষায় একটি প্রশ্নকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। ১২নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম করো, যাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হন?’ এই ‘সন্ত্রাসবাদী’ কথাটা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে যা। যাঁরা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের এভাবে ‘সন্ত্রাসবাদী’ অ্যাখ্যা দেওয়া গর্হিত অপরাধ বলে সরব হয় বিভিন্ন মহল।  তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে প্রশ্নপত্রের ত্রুটি এড়িয়ে গেল, তানিয়ে শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে আইনজীবী সহ সমাজের নানা পেশার মানুষজন সরব হন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উপাচার্যের কাছেও প্রতিবাদপত্র পৌঁছে যায়। তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দেন উপাচার্য। পরীক্ষা নিয়ামককে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। সেইমতো ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উপাচার্যের টেবিলে রিপোর্ট জমা পড়ে।

শিক্ষামহল সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক ধাপ পেরিয়ে একটা প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। প্রথমধাপটি পেপার সেটার। দ্বিতীয় ধাপে একজন অধ্যাপক মডারেটরের ভূমিকায় থাকেন। তৃতীয় ধাপে থাকেন প্রুফ রিডার। স্নাতকস্তরে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিতে সবার ঊর্ধ্বে থাকেন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে প্রথমে ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছিল। পরে সেটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়। গোল বেঁধেছে এই অনুবাদ করার সময়। ইতিহাসের ইংরেজি প্রশ্নপত্রে ওই ১২ নম্বর প্রশ্নে লেখা হয়েছে—‘মিলিট্যান্ট ন্যাশনালিস্ট’। কথাটির সঠিক বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারী বা বিপ্লবী’। সেটা না করে সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে দেওয়া হয়েছে। এই বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে যে ভুল হয়েছে, সেটা মানছেন উপাচার্যও। আবার ‘মিলিট্যান্ট’ কথাটিতেওশিক্ষাবিদদের একটা বড় অংশের আপত্তি রয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, এতবড় একটা ভুল কীভাবে তিনটি স্তর পেরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে গেল! 

এদিন পরীক্ষা নিয়ামকের রিপোর্ট জমা পড়ার পরই উপাচার্যের উপস্থিতিতে একটি জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তানিয়ে আলোচনা হয়। তারপরই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ইউজি বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান এবং মডারেটরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্য বলেন, ‘প্রশ্নপত্র নির্ভুল করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা রয়েছেন। তাঁদের কারও না কারও অসাবধানতার জেরে এই ভুল হয়ে গিয়েছে। এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল শব্দ। সামগ্রিক সমাজের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছেছে। মেদিনীপুর বিপ্লবীদের জায়গা। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এখানকার অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। বিপ্লবীদের প্রতি জেলার মানুষের প্রচণ্ড আবেগ রয়েছে। সেজন্য এই ত্রুটিকে আমরা সাধারণ ভুল হিসেবে মনে করছি না। বরং অধিকতর গুরুত্ব দিয়েই দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ এই প্রসঙ্গে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই বিক্ষোভ করছে। এইধরনের কাজ পাঠ্যপুস্তকেও হয়েছে। এর আগে বিজেপির প্রোপাগান্ডা ছবিতে আরএসএসের এজেন্ডা দেখাতে সশস্ত্র সংগ্রামের ধারাকে বিকৃত করা হয়েছে। কাদের মদতে বিপ্লবীদের অপমান করা হচ্ছে, এর জবাব আমরা নিয়েই ছাড়ব।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Loading...