তমলুক: ইউনিয়ন কোটায় চাকরি পেয়েও ময়না কলেজের ছাত্র-যুব নেতাদের কারও অবসর সময়ের পেশা ঠিকাদারি, আবার কেউ বেছে নিয়েছেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে মদ বিক্রির কাজ। ২০১৩ সালে এই কলেজে একসঙ্গে ১৩ জন ক্যাজুয়াল কর্মী হিসেবে চাকরি পান। তাঁদের প্রায় সকলেই ছাত্র ইউনিয়নের হোমড়া চোমড়া নেতা। তৎকালীন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিকে ধরে তাঁরা কলেজে চাকরি নিশ্চিত করে নেন। ১২ বছর আগে প্রতি মাসে তাঁদের মাইনে ছিল দু’ হাজার টাকা। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হতো। এখন সেটা বেড়ে আট-ন’ হাজার টাকা হয়েছে। এখনও কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকেই সেই অর্থ বহন করতে হয়। সময়ের সঙ্গে মাইনে বাড়লেও তাঁরা এখন উপরি রোজগারে মন দিয়েছেন। অনেকটা ময়দানে খেপ খেলা প্লেয়ারদের মতোই কলেজে এসে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেন। তারপর বেলা বাড়লে যে যাঁর আসল পেশায় ভিড়ে যান।
২০১৩ সালে এই কলেজে ক্যাজুয়াল কর্মী হিসেবে চাকরি পান উত্তম লিজকা। বর্তমানে তিনি ময়না যুব তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এছাড়াও কলেজ অস্থায়ী কর্মচারী সংগঠনের জেলা সভাপতি এবং রাজ্য কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন। এছাড়াও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন। তাঁর সঙ্গেই কলেজে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে ঢুকেছিলেন দামোদর আদক, নির্মল বেরা, শ্যামল বেরা, তরুণ পড়িয়া প্রমুখ। দামোদর একসময় ছাত্র ইউনিয়নের দাপুটে নেতা ছিলেন। সেই সুবাদে ময়না কলেজে অস্থায়ী কর্মী হওয়ার সুযোগ চলে আসে। এখনও কলেজে কাজ করেন। তবে, বিকেলের পর বিলাতি মদের দোকানে মদ বিক্রি করতে বসে যান। উপরি রোজগারের জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে দামোদরের জবাব। ময়না-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোট এলেই বিরোধী শায়েস্তা করতে যাঁদের ডাক পড়ে সেই তালিকায় প্রথমেই থাকেন নির্মল বেরা। কলেজ ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে ২০১৩ সালে ক্যাজুয়াল কর্মীর চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু, বেতনের টাকা এখন তাঁর কাছে হাতের ময়লা। তাই পার্টির দাদাদের ম্যানেজ করেই ঠিকাদারি লাইসেন্স বের করে নিয়েছেন। কলেজে গিয়ে নামমাত্র ডিউটি করে ঠিকাদারিকেই মূল জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন নির্মল। এভাবেই একসময় ইউনিয়ন কোটায় চাকরি পেলেও কলেজের সেইসব দাদারা আজ অধিক রোজগারের নেশায় বুঁদ। ২০১৩ সালে নিয়োগ হলেও আজও ওই ক্যাজুয়াল কর্মীদের নামের তালিকা কলেজের ওয়েবসাইটে নেই। তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও ডিউটি নেই। কেউ ক্লার্কের সহায়ক আবার কারও দায়িত্ব গেটে দাঁড়িয়ে থাকা। একসময় ইউনিয়ন দাপানো দাদাদের এরকম কাজ একেবারেই পছন্দ নয়। তাই তাঁরা কলেজে গিয়ে নিজেদের মতো করে ডিউটি বেছে নেন।
এনিয়ে ময়না কলেজের অস্থায়ী কর্মী তথা অস্থায়ী কর্মচারী সংগঠনের জেলা সভাপতি উত্তম লিজকা বলেন, কসবা ল’ কলেজের ঘটনার পরই বিভিন্ন কলেজে ক্যাজুয়াল কর্মীদের নিশানা করা হচ্ছে। তাঁরা কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, সেসব নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। আমরা অনেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি। তারপরও উপেক্ষা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়। এজন্য আমরা একটা মঞ্চ তৈরি করে অস্থায়ী কলেজ কর্মীদের স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে লড়াই করছি। কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখার চেয়ে নিযুক্ত কর্মী ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, সেটা যাচাই করা বেশি জরুরি। আমাদের কেউ কেউ ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু, সেটা ডিউটি ফাঁকি দিয়ে কেউ করেন না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন