নয়াদিল্লি, কলকাতা ও হাওড়া: ৯ বগির ট্রেন এখন অতীত। শিয়ালদহ-হাওড়া শাখায় সব লোকাল বর্তমানে ১২ বগির। তারপরও অবশ্য নিত্যযাত্রীদের সুরাহা হয়নি। দিনের ব্যস্ত সময়ে ভিড়ে চাপে লোকালের দরজায় বাদুড়ঝোলা হয়ে, প্রাণ হাতে করে গন্তব্যে যেতে হয় অনেক মানুষকে। সেই ভোগান্তির কাল সম্ভবত ফুরোতে চলেছে শীঘ্রই। এবার ১৬ বগির লোকাল ট্রেন তৈরি করছে রেলমন্ত্রক। মঙ্গলবার হরিয়ানার মানেসরে এমনই ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব স্বয়ং। তবে শুধুই ১৬ বগি নয়, পরিস্থিতি বিশেষে ২০ কোচের লোকাল ট্রেন তৈরির পথেও হাঁটবে রেলমন্ত্রক। সপ্তাহখানেক আগে মুম্বইতে ভিড়ে ঠাসা লোকালের পাদানিতে ঝুলে গন্তব্যে যেতে গিয়ে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছেন একাধিক যাত্রী। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তারপরই রেলমন্ত্রীর লোকালের কামরা বৃদ্ধির ঘোষণাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিন মানেসরে গতিশক্তি কার্গো টার্মিনালের উদ্বোধন করেন বৈষ্ণব। সেখানেই তাঁর ঘোষণা, ১৬ এবং ২০ কোচের এমন মোট ১০০টি মেইন লাইন ইএমএউ মেমু ট্রেন উৎপাদন করা হবে। বর্তমানে লোকাল ট্রেনগুলি প্রধানত আট এবং ১২ কোচের। এগুলিতে কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে যাত্রীরা আরও স্বচ্ছন্দে স্বল্প দূরত্বের ট্রেন যাত্রা করতে পারবেন। তেলেঙ্গানার কাজিপেটে শীঘ্রই রেলের নতুন উৎপাদন কারখানা চালু হতে চলেছে। সেখানেই বেশি বগির মেইন লাইন ইএমএউ মেমু ট্রেন তৈরি করা হবে। মন্ত্রক সূত্রে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র কোনও একটি শহরের কথা মাথায় রেখে এহেন ঘোষণা করেননি রেলমন্ত্রী। মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি সহ গোটা দেশজুড়ে লোকাল ট্রেনের কামরা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যদিও এই উদ্যোগ আদৌ কতদিনে সম্পূর্ণ হবে? তাতে ঘনঘন পরিষেবায় কোনও খামতি দেখা যাবে না তো? পরিকাঠামোগত এই প্রসারের সীমাবদ্ধতা কী কী? রেলমন্ত্রীর ১৬ বগির ট্রেন প্রসঙ্গে এমন অনেক প্রশ্নই নিত্যযাত্রীদের মুখে মুখে।
রেলমন্ত্রীর ঘোষণা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা পাবেন কলকাতা শহর ও শহরতলির বাসিন্দারা। তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী? এদিন সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে অফিসফেরত গোবরডাঙ্গার বাসিন্দা অচিন্ত্য মণ্ডলের গলায় যেমন আশার আলো। বললেন, ‘১২ কোচের ট্রেন ১৬ কিংবা ২০ হলে তো খুবই ভালো হয়। অন্তত সকাল-সন্ধ্যায় অফিস টাইমে মারাত্মক ঠেলাঠেলি তো বন্ধ হবে। বাদুড়ঝোলা ভিড় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনাও কমবে।’ দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা নিবেদিতা দাসের আবার না আঁচালে বিশ্বাস নেই। প্রশ্ন তুললেন, ‘১৬ বা ২০ বগির ট্রেন হলে পরিষেবা ঠিক থাকবে তো? এত বিশাল ট্রেন চালানোর খরচ তো অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ঘনঘন ট্রেনের পরিষেবা দেওয়া কি সম্ভব হবে?’ শ্রীরামপুর-হাওড়া লোকালের যাত্রী অর্ধেন্দু পাল ও রীতা বাগ অবশ্য একমত, ‘সন্ধ্যার পর ব্যান্ডেল লাইনে সমস্ত ট্রেনে অত্যধিক ভিড় থাকে। বগির সংখ্যা বাড়ালে সেই চাপ খানিকটা কমবে।’ এদিন মুম্বইতে রেলমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আরও ৫০টি ‘নমো-ভারত’ এসি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আসবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন