কলকাতা: বুড়ো ছাত্রনেতারাই এখন মাথাব্যথা তৃণমূলের। বয়সের গাছপাথর নেই। এদিকে দলের হয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রসমাজকে পরিচালনার ঠেকা নিয়ে বসে আছেন! কলকাতা সহ রাজ্যের কলেজগুলিতে ঢুঁ মারলেই এঁদের দেখা মিলবে। ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের সবসময় সমীহ করে চলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, ছাত্র নির্বাচন না হলে এই ধরনের কাকু-জেঠুর বয়সি ছাত্রনেতাদের হাতেই থাকবে ক্যাম্পাসের ক্ষমতা। আট বছর ধরে ক্যাম্পাস ইলেকশন আটকে রাখার ফলই এখন ভুগতে হচ্ছে তৃণমূলকে। প্রসঙ্গত, ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা মনোজিৎ মিশ্রর বয়স ‘মাত্র’ ৩১ বছর!
২০১৩ সালে বন্দর এলাকার হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র নির্বাচনের দিন খুন হয়ে যান কলকাতা পুলিসের এসআই তাপস চৌধুরী। তারপর থেকেই কলেজ নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তাই বড় মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসনের। ২০১৭ সালে ছাত্র নির্বাচনের পর আর সে পথে হাঁটেনি সরকার। এর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের পরিবর্তে ছাত্র কাউন্সিল তৈরির গাইডলাইন তৈরি হয়। তবে সেসব বাস্তবে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। গত বছর ২৮ আগস্ট, টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে এসে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর পরেই ছাত্রভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আরও একটি পুজো চলে এলেও ওই ঘোষণা কার্যকর হয়নি। মার্চে কলকাতা হাইকোর্টও ছাত্র নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করে হলফনামা আকারে তা জমা দিতে বলেছিল সরকারকে। সেটাও এখনও তৈরি হয়নি বলেই খবর। এই অবস্থায় আদৌ কবে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
টিএমসিপির নেতারাও জানেন ভোটের গুরুত্ব। তবে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য তাঁরা করছেন না। এক সময়ের টিএমসিপি নেতা বলেন, ‘ক্যাম্পাসের দাদারা এখন করদ রাজ্যের রাজা। দলের কোনও সমাবেশে ভিড় বাড়াতে তাঁরাই ক্যাম্পাস খালি করে ছাত্রছাত্রী নিয়ে যান। তার বিনিময়ে একচ্ছত্র ক্ষমতা উপভোগ করেন। ছাত্রদের স্বার্থে কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়ন, নিয়মিত ক্লাস বা স্কলারশিপের দাবি তাঁরা তোলেন না। পপুলিস্ট রাজনীতি করার জন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষা বাতিলের দাবি, হাজিরা বাড়িয়ে দেওয়ার দাবিতে তাঁরা ছাত্রছাত্রী নিয়ে কর্তৃপক্ষের উপরে চড়াও হন। এতে ভালো ছাত্রছাত্রীরা ক্রমশ সরে যান সংগঠন থেকে।’ ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভানেত্রী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী দাবি তুলেছেন, যতদিন না নির্বাচন হচ্ছে, ততদিন ইউনিয়ন রুমগুলি বন্ধ রাখা হোক।
এই দাবিতে তাঁরা দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের সামনে বিক্ষোভও দেখান। অল বেঙ্গল প্রিন্সিপালস কাউন্সিলও এই ঘটনা নিয়ে চিন্তিত। রাজ্য সম্পাদক মানস কবি বলেন, ‘অধ্যক্ষদের অনুরোধ করব, কোনও জায়গা সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে থাকলে সেখানে নতুন ক্যামেরা বসানো হোক। নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে নিয়মিত সবক’টি ফ্লোরে নজরদারি চালানো হোক। অধ্যক্ষের আগাম অনুমতি ছাড়া কোনও ছাত্র যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে। বর্তমান ছাত্ররাও আই কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকুক।’ আর জি করের ঘটনার পরে অধ্যক্ষ পরিষদের তৎকালীন নেতৃত্ব ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ‘ব্লাইন্ড স্পটে’ নজরদারি বাড়ানো, ছাত্রছাত্রীদের সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছিল সদস্যদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন