রঘুনাথপুর: ঘুমন্ত স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করার ঘটনায় তিন বছর পর স্বামীকে ফাঁসির সাজা দিল রঘুনাথপুর মহকুমা আদালত। সাজাপ্রাপ্তের নাম গৌতম মাহাত। তার বাড়ি কাশীপুর থানার মনিহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙাডি গ্রামে। মঙ্গলবার রঘুনাথপুর মহকুমার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায় এই রায় ঘোষণা করেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌতম রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করত। পুরুলিয়ার মফস্সল থানার চাকড়া গ্রামের মমতা মাহাতর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তান হয়। গৌতম বাড়িতে যে টাকা পাঠাত তা পুরোটাই তার স্ত্রী খরচ করে ফেলায় প্রায়ই অশান্তি হতো। খুনের ঘটনার দু’দিন আগে ছেলে অসুস্থ থাকায় গৌতম বাড়ি আসে। মমতা চিকিৎসার জন্য গৌতমের কাছে টাকা চাইতেই তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। তার জেরে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ খুনের ঘটনাটি ঘটে। বাবা-মায়ের সঙ্গেই ঘুমাচ্ছিল ছ’বছরের দেবজিৎ মাহাত ও তিন বছরের মেয়ে প্রিয়া মাহাত। ভোরে সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন তখন গৌতম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে খুন করে। কুড়ুলের কোপে তিনজনই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এরপর গৌতম নিজে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সে নিজেই কাশীপুর থানায় ফোন করে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি রাঙাডি গ্রামে আসে পুলিস। চারজনকে উদ্ধার করে কাশীপুর কল্লোলী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মমতা ও তার দুই সন্তানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালে গৌতমের চিকিৎসা চলে। ওইদিনই মমতার বাবা নেপাল মাহাত কাশীপুর থানায় গৌতমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
গৌতম সুস্থ হওয়ার পর পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে সে আর ছাড়া পায়নি। জেল হেফাজতেই ছিল। সোমবার গৌতমকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এদিন বিচারক প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায় সাজা ঘোষণা করেন। তারপরেই গৌতম আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী মহম্মদ জাকির আনসারি বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করার ঘটনায় মামলা রুজু হয়। কাশীপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর কল্যাণকুমার সখা ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ২০২৩ সালের ৬ জুন ঘটনার চার্জশিট পেশ করা হয়। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ঘটনায় মোট ১৫ জন সাক্ষ্য দেন। সকলেই গৌতমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে বিচারক এদিন ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন।
গৌতমের হয়ে সওয়াল করেন সরকার নিযুক্ত আইনজীবী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের কেউ গৌতমের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। গরিব হওয়ায় সে মামলা লড়ার জন্য আইনজীবী জোগাড় করতে পারেনি। তাই সরকারের নির্দেশ মতো আমি তার হয়ে সওয়াল করি। নৃশংসতার বিষয়টি বিবেচনা করে বিচারক তাকে ফাঁসির সাজা দেন। এই সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন