বিষ্ণুপুর: বিষ্ণুপুর শহরের স্কুল থেকে পালিয়ে ষাঁড়েশ্বর মন্দিরে যাওয়ার সময় দ্বারকেশ্বর পেরতে গিয়ে তলিয়ে গেল নবম শ্রেণির তিন ছাত্র। মঙ্গলবার দুপুরে মোট ১০ জন ছাত্র স্কুল থেকে পালিয়ে সাইকেলে করে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দ্বারকেশ্বরে সুভাষপল্লির ঘাটে যায়। তার মধ্যে সায়ন চট্টোপাধ্যায়, অর্কদীপ দাস ও পরমেশ্বর মিশ্র নিখোঁজ হয়ে যায়। তিনজনেরই বয়স ১৪বছর। তারা সাঁতার জানত না। হেঁটে নদ পেরতে গিয়ে মাঝ নদীতে জলের তোড়ে টালমাটাল হওয়ায় তিনজনেই তলিয়ে যায়। তখন অন্যান্য ছাত্ররা চিৎকার করে লোকজন ডাকাডাকি করে। খবর পেয়ে পুলিস আসে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা বোট নামিয়ে নদে তল্লাশি চালান। স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও নদে নেমে খোঁজ চালান। ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।
এদিন নিখোঁজ ছাত্রদের চার সহপাঠী শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিক সাহা, শুভম পাত্র ও অরিজিৎ সোরেন বলে, এদিন ওরা তিনজন স্কুলে আসার পর বেরিয়ে যায়। ওদের সঙ্গে আরও তিনজন যায়। আমরা চারজন সাইকেলে ওদের পিছু নিই। সুভাষপল্লিতে এসে দেখি তিনজন শহরে ফিরে যাচ্ছে। অপর তিনজন নদের জলে রয়েছে। তারা হেঁটে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ওদের দেখে আমরাও জলে নামি। ওরা মাঝ নদীতে চলে গিয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই ওদের আর দেখতে পাইনি। তখন লোকজন ডাকাডাকি করি।
নিখোঁজ সায়নের বাবা বিষ্ণুপুর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ছেলে রোজকার মতো এদিনও স্কুলে গিয়েছিল। দুপুরে লোকমুখে খবর পাই ও জলে ডুবে গিয়েছে। বিদ্যালয় থেকে এতগুলি ছেলে ক্লাস না করে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে তবুও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। তা হলে এই দুর্ঘটনা হয়তো ঘটত না।
দুপুরে সুভাষপল্লিতে দ্বারকেশ্বরের ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, নদে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের একটি বোট তল্লাশি চালাচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবী সারি দিয়ে জলে খোঁজ করছে। পাড়ে ভিড় থিক থিক করছে। পাশের গ্রাম ছাড়াও বিষ্ণুপুর শহর থেকেও বহু মানুষ আসেন। নদের ওইপারে বাবা ষাঁড়েশ্বরের ঘাটেও স্থানীয় জন্তা ও ডিহর গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান। তলিয়ে যাওয়া ছাত্রদের পরিবারের লোকজন নদের তীরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর পেয়ে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম গোস্বামী সহ পুলিস আধিকারিকরা আসেন।
বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবব্রত ঘোষ বলেন, আমাদের তিন ছাত্র নদে তলিয়ে গিয়েছে। আমি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এদিন ওই ছাত্ররা স্কুলে ঢোকেনি। তারা স্কুলের বাইরে থেকেই চলে গিয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন