নবদ্বীপ: বাড়ির একতলা নার্সিংয়ের ছাত্রীদের ভাড়া দিয়েছিলেন বাড়তি উপার্জনের আশায়। কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেওয়াই কাল হয়ে দাঁড়াল পেশায় টোটো চালক নেপাল দেবনাথের। শত্রুতার জেরে খুন হলেন।
৬৮ বছর বয়সি নেপালবাবুর পড়শি নান্টু চাইছিল না নার্সিংয়ের ছাত্রীরা সেখানে থাকুন। ছাত্রীদের তুলে দেওয়ার জন্য নেপালবাবুকে চাপ দিচ্ছিল। সোমবার সকালে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে শাসিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও রাজি হননি নেপালবাবু। সন্ধ্যায় ‘উচিত শিক্ষা’ দিল নান্টু। আচমকা হামলা চালিয়ে মাথায় রডের বাড়ি মেরে খুন করে নেপালবাবুকে। তারপরই গা ঢাকা দেয় নান্টু দেবনাথ ।
মঙ্গলবার বিকেলে সরকারপাড়ার একটি নার্সিং স্কুল থেকে অভিযুক্ত নান্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। নান্টুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বরাবরই উদ্ধত স্বভাবের ছিল সে। নেশাভাং করত। এলাকায় ছোটখাটো গোলমাল মারামারিতেও জড়িত থাকত বলে অভিযোগ। নেপালবাবুর পরিবারের অভিযোগ, বাড়িতে নার্সিং ছাত্রীদের রাখাকে কেন্দ্র করে অসন্তুষ্ট ছিল নান্টু। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, নান্টু স্থানীয় ওই নার্সিং স্কুলের ক্যান্টিনে কাজ করে। সেখানে তাঁর মাও কাজ করেন। ওই নার্সিং স্কুলেরই তিন পড়ুয়া নেপালবাবুর বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। নান্টু তাদের তুলে দেওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে। কারণ ওই পড়ুয়ারা ক্যান্টিনে খাওয়াদাওয়া করলে নান্টুর বাড়তি উপার্জন হতো। কিন্তু নেপাল তাতে রাজি না হওয়ায় জীবন দিয়ে খেসারত দিতে হল। স্থানীয় কাউন্সিলারের ইঙ্গিতও সেই দিকেই। কাউন্সিলার নিতাইচন্দ্র দাস বলেন, নান্টু ছোটবেলা থেকেই অসামাজিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছে। ওর বাবাও এলাকায় দাগি সমাজবিরোধী বলে পরিচিত ছিল। তাকে খুন হতে হয়। তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকেলে যাদের সঙ্গে নিয়ে নান্টু নেপালবাবুকে শাসিয়ে ছিল, তারাও পরোক্ষভাবেই এই খুনের সঙ্গে জড়িত। পুলিস অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিক।
এদিন সকালে নবদ্বীপ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা থমথমে। সোমবার রাতেই নার্সিং পড়ুয়াদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিস। নেপালবাবুর ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। বাবাকে হারিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূ কান্নাকাটি করছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন নেপালবাবু। তাঁকে হারিয়ে কীভাবে দিন চলবে তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না তাঁরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে নান্টু বাড়িতে এসে শাসিয়ে গিয়েছিল, নার্সিং পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে সরিয়ে না দিলে ফল ভালো হবে না বলে। তারপর সাতটা নাগাদ সরকারপাড়ার নিশান ক্লাবের সামনে টোটোতে বসে মোবাইল দেখছিলেন নেপাল দেবনাথ। তখনই তাঁর মাথায় নান্টু আঘাত করলে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন নেপালবাবু। বউমা রিয়া জানতে পেরে ছুটে আসেন। এরপর তিনি এবং তাঁর স্বামী নিশীথ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার রাতে পুত্রবধূ রিয়া দেবনাথ নবদ্বীপ থানায় নান্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
মৃতের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত নান্টুর ফাঁসি হোক। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন