বহরমপুর: বহরমপুরে ঘর জামাইয়ের বিরুদ্ধে শাশুড়িকে খুনের অভিযোগ উঠল। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম মনোয়ারা বিবি ওরফে মানেজা (৪৫)। তাঁর বাড়ি বহরমপুরের গজধরপাড়ায়। সোমবার রাতে তাঁকে বাড়িতেই হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে জামাইয়ের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর রক্তাক্ত হাঁসুয়া হাতে নিয়েই চম্পট দেয় অভিযুক্ত। খবর জানাজানি হতে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযুক্ত জামাইয়ের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে বহরমপুর থানার পুলিস।
জানা গিয়েছে, ঘর জামাই হিসেবে থাকত অভিযুক্ত যুবক। অভিযোগ, ওইদিন রাতে স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে সে। শাশুড়ি তার প্রতিবাদ করলে প্রথমে বচসা হয়। অভিযুক্ত রাগে শাশুড়ির ঘরের দরজা লাথি মেরে ভাঙার চেষ্টা করে। শাশুড়ি বাধা দিতে এলে রান্না ঘর থেকে হাঁসুয়া নিয়ে এসে শাশুড়ির বুকে একের পর এক কোপ মারতে থাকে। চোখের সামনে মাকে মরতে দেখে দুই মেয়ে আতঙ্কে চিৎকার শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে রক্তাক্ত মহিলাকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিস দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিস মর্গে পাঠিয়েছে। বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, আমরা মামলা রুজু করে ঘটনা তদন্ত শুরু করেছি। মূল অভিযুক্ত ওই জামাইকে খুঁজে বের করা হবে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোয়ারার তিন মেয়ের অনেকদিন আগেই বিয়ে হয়েছে। তার। বছর দশেক আগে মেজ মেয়ে সোনালীর বিয়ে হয় স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে। তাদের একটি সাত বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রি ও ঠিকাশ্রমিক হিসাবে কাজ করতো সোনালীর বর। তবে বেশিরভাগ দিন কাজে না যাওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলত। সোমবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চরমে উঠলে মীমাংসা করতে এসে জামাইয়ের রোষানলে পরেন শাশুড়ি।
মৃতার এক মেয়ে পাপিয়া বিবি বলেন, চোখের সামনে আমার মাকে খুন করে দিল বোনের বর। প্রথমে বোনের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছিল ওর স্বামীর। বোনের গায়ে হাত তুলছিল। আমার মা প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়ির দরজায় লাথি মেরে ভাঙার চেষ্টা করে সে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মা তাকে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলে। সেই শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে গিয়ে হাঁসুয়া নিয়ে এসে মায়ের বুকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। তারপর নিমেষের মধ্যে পালিয়ে যায়।
মৃতার বোন আনোয়ারা বিবি বলেন, হাঁসুয়া দিয়ে মেরে সেটা নিয়েই পালিয়ে গেছে জামাই। ঘটনার সময় আমার দুই মেয়েও ওখানে ছিল। ওরা কোনওক্রমে রক্ষা পেয়েছে। জামাই বাড়ির দরজা লাথি মেরে ভাঙছিল। এর আগেও বাড়ির সকলের সঙ্গে বাজে ব্যবহার এবং মারধর করেছে। আমার দিদিকে খুন করে দিল। আমরা ওর ফাঁসি চাই।
প্রতিবেশী জাহাঙ্গির শেখ বলেন, চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা ওখানে হাজির হয়ে দেখি মনোয়ারা বউদি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। আমি এবং পাশের কয়েকজন টোটোতে তুলে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হাসপাতালে ঢোকার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই জামাইয়ের আমরা কঠিন শাস্তি চাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন