কলকাতা: হোমওয়ার্কের খাতায় ছাগল প্রস্রাব করেছে। তাই নাকি সে স্কুলে আনতে পারেনি খাতাগুলি। খুদে পড়ুয়ার এহেন অজুহাতে হেসে কুটোপাটি শিক্ষক থেকে অন্য পড়ুয়ারা। তবে, ক্লাসরুমের এই ঘটনা স্রেফ স্কুলেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষক তা শেয়ার করে দিয়েছেন ফেসবুকেও! তার নীচে জমা পড়ছে হাজারো কমেন্ট। খানাকুলের একটি স্কুলের এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে। সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া।
অন্য ঘটনাটি জঙ্গলমহল এলাকার একটি স্কুলের। এক খুদে ছাত্রী তার শিক্ষককে জানাচ্ছে, স্কুল তার ভালো লাগে না। তাই সে ব্যাগ, পেতে বসার আসন, সব পরিপাটি করে গুছিয়ে বাড়ি রওনা দিচ্ছে। এও অভিযোগ জানাচ্ছে, তার মা নাকি বলেছিল, স্কুলে কিছুক্ষণ থেকেই সে বেরিয়ে আসতে পারবে। তবে, এখন সে দেখছে অনেকসময় পেরিয়ে গিয়েছে। শিক্ষক তাকে বলছেন, ছুটি না-হলে বেরনো যাবে না। তাতে ওই ছাত্রীর উত্তর, তার খিদে পেয়ে গিয়েছে। শিক্ষক বলছেন, স্কুলেই খাবার ব্যবস্থা আছে। তাতে সেই ছাত্রী সবাইকে অবাক করে বলছে, কোনও এক ডাক্তার নাকি তাকে বাইরের খাবার খেতে বারণ করেছেন। সেটিও শিক্ষক ছড়িয়ে দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আপাত নিরীহ এবং ‘মজা’র এই ঘটনাগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডিজিটাল দলিল খুদে পড়ুয়াদের পরবর্তীকালে বিব্রত করবে। চাইলেও তারা আর এগুলি মুছে ফেলতে পারবে না সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে। তবে, শুধু নৈতিক দিকই নয়, এ ধরনের ভিডিও আপলোড করা আইনবিরুদ্ধও। সেটা মনে করিয়েই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষাকর্তারা। কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, এই ধরনের ভিডিও আপলোড তো দূরের কথা, তা রেকর্ডই করা যায় না। আমরা রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছি। প্রয়োজনে শিক্ষকদের জবাব তলব করা হবে। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক সন্তান ও অভিভাবকের মতো। এটা সর্বসমক্ষে এনে দেওয়া অবিবেচকের মতো কাজ। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন পর্ষদের সচিব রঞ্জন ঝা-ও। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, স্কুলের পরিবেশে এই ধরনের ভিডিও করা যায় না। এনিয়ে গতবছরই একটি নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদেরও ক্লাসরুমে রিলস তৈরি বা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতে বলব।
রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলেন, ‘এই ধরনের কাজ একেবারেই করা যায় না। খানাকুলের ঘটনায় আমরা ভিডিওটি মুছে দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে শোকজ করেছি। তবে, অন্য ভিডিওটি আমাদের চোখে পড়েনি। সবসময় আইনি বাধ্যবাধকতায় নয়, নীতিবোধ থেকেও শিক্ষকদের বিষয়টি ভাবতে হবে। এরকম ভিডিও পেলেই আমরা আমাদের আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করে থাকি।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন