তমলুক: তীর্থস্থান রূপে ইতিহাস গড়ার পর এই প্রথম রথযাত্রা উৎসবে শামিল হচ্ছে দীঘা। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে তারকেশ্বর মন্দিরের কৌশলে।
আগামী ২৭ জুন, শুক্রবার মূল মন্দির থেকে রথে চেপে মাসির বাড়ি যাবেন প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। রশিতে টান দিয়ে পুণ্যলাভে ভিড় জমাবেন কম করে দু’লক্ষ মানুষ। উপস্থিত থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবটাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পদপিষ্টের মতো কোনও দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সতর্ক তারা। কুম্ভমেলা থেকে বেঙ্গালুরু—পদপিষ্টের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও টাটকা। স্বাভাবিকভাবে নব তীর্থস্থান দীঘা যাতে এমন কোনও ঘটনার সাক্ষী না হয়ে ওঠে, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। সেক্ষেত্রে তারকেশ্বর মন্দিরে যে আদপ-কায়দায় ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেটাকেই অনুসরণ করতে চান তারা।
সোমবার বিকেলে ডিএসডিএ ভবনে রথযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি মিটিং হয়। সেখানে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য ছাড়াও পূর্ত, বিদ্যুৎবণ্টন সহ বিভিন্ন দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। রথযাত্রায় দীঘার মন্দিরে ব্যাপক ভিড় হবে বলে অনুমান করছে প্রশাসন। ওইদিন মন্দিরের সামনে মেন গেট দিয়ে ভক্তদের ভেতরে ঢোকানো হবে। ৬ ও ৭ নম্বর গেট দিয়ে ভক্তদের বেরনোর ব্যবস্থা করা হবে। বেঁধে দেওয়া হবে বাঁশের ব্যারিকেড। রাস্তার দু’ধারে দাঁড়ানো ভক্তদের সেই রশিতে টান মারার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
মাসির বাড়িতেও ভিড় সামাল দিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন। মূল রাস্তা দিয়ে মাসির বাড়িতে যাওয়া যাবে। যদিও ভক্তদের বেরনোর গেট আলাদা করা হচ্ছে। সি-বিচ বরাবর রাস্তা দিয়ে তাঁদের বেরতে হবে। ২৬ জুনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্য ভিআইপিরা চলে আসবেন দীঘায়। ইসকনের বিদেশি ভক্তরাও রথযাত্রায় আসবেন। ওইদিন থেকেই দীঘায় যান চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে পুলিস। তবে, সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে রথের রশি টানার সময় ভিড়কে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা। কারণ, ওই সময়ই অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকে বেশি। গতবছরই পুরীর রথযাত্রায় পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন এক পুণ্যার্থী। চলতি বছর প্রয়াগে মহাকুম্ভেও পদপিষ্ট হয়ে বহু পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। অতি সম্প্রতি ঘটে গিয়েছে বেঙ্গালুরু-কাণ্ড। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে দীঘায় রথযাত্রা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক পুলিস-প্রশাসন।
তারকেশ্বর মন্দিরে শ্রাবণ মাসে লাগামছাড়া ভিড় হয়। মন্দিরে ঢোকার পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। সেখানে আজ পর্যন্ত তেমন কোনও অঘটন ঘটেনি। শৃঙ্খলার সঙ্গে সকল পুণ্যার্থী বাবার মাথায় জল ঢালেন। একসময় হুগলির গ্রামীণে অতিরিক্ত পুলিস সুপারের দায়িত্ব সামলেছেন সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। তিনি এখন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিস সুপার। তারকেশ্বর মন্দিরে ভিড় নিয়ন্ত্রণে তাঁর অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাচ্ছে জেলা প্রশাসন। সেই মতো জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসি বাড়ি পর্যন্ত নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর ড্রপ গেট বসানো হবে। ফলে, ধাপে ধাপে রশি টানার সুযোগ পাবেন পুণ্যার্থীরা। এসব কিছু পরিচালনায় থাকবেন কয়েক শো পুলিস অফিসার। তাঁদের সহযোগিতা করবেন পুলিসকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারা। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার ফোর্স মোতায়েন থাকবে। অন্যদিকে, রথযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায়, সুজিত বসু, স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, ‘জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি পর্যন্ত পুরো এক কিলোমিটার জুড়ে রথের রশি থাকবে। সোমবার সন্ধ্যায় এনিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে।’ পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ভক্তরা যাতে নিশ্চিন্তে রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে।’-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন