কলকাতা: কসবার ভাড়ার ফ্ল্যাটে আত্মঘাতী গোটা পরিবার! মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কসবার রাজডাঙা গোল্ড পার্ক এলাকায় একটি আবাসনের তিনতলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পুলিস উদ্ধার করে শরজিৎ ভট্টাচার্য (৭০), তাঁর স্ত্রী গার্গী (৬৮) এবং তাঁদের পুত্র আয়ুস্মান ভট্টাচার্যের (৩৮) ঝুলন্ত নিথর দেহ। আয়ুস্মান মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ফ্ল্যাটের ওই ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। তিনজনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বাঁধলেও, আর্থিক অনটন ও দেনার বোঝার কারণেই গোটা পরিবারের আত্মঘাতী হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জেনেছে। ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিসের হোমিসাইড ও গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। কসবা থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুজনিত একটি মামলা শুরু হয়েছে।
তবে চরম আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যেও যে কারও কাছে হাত পাততে নারাজ ছিল ভট্টাচার্য পরিবার, তার ইঙ্গিত রয়েছে সুইসাইড নোটে। স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছেন পৃথিবী ছেড়ে, এমনটাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই নোটে। তাঁদের শেষকৃত্য যাতে সম্পন্ন হয়, এমন আর্জিও আত্মীয়স্বজনের কাছে করে গিয়েছে ভট্টাচার্য পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁদের দু’জন পরিজন গোল্ড পার্কের ফ্ল্যাটে যান। পুলিস তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিন্তু ভট্টাচার্য পরিবার সম্পর্কে বিশদ কোনও খোঁজখবর নেই প্রতিবেশীদের কাছে। গোটা ঘটনায় হতবাক তাঁরা। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খান, বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত (স্বরূপ) ঘোষ ও কাউন্সিলার লিপিকা মান্না।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত-আট বছর ধরে ৫০, রাজডাঙা গোল্ড পার্কের ওই আবাসনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকত ভট্টাচার্য পরিবার। পরিবারের কর্তা শরজিৎবাবু একসময়ে জমি-বাড়ি কেনা-বেচার ‘দালালি’ করতেন। স্ত্রী গার্গীদেবী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। ছেলে আয়ুস্মান মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। সোনারপুরের জনৈক দিলীপ কাঁড়ারের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিল ভট্টাচার্য পরিবার। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, প্রতিদিন সকালে শরজিৎবাবু ও তাঁর ছেলে আয়ুস্মানকে রাস্তার কল থেকে জল ভরতে দেখা যেত। শুধু ওইটুকুই। পরিবারের সদস্যরা এলাকার কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। তাই তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও খোঁজখবরও নেই স্থানীয়দের কাছে।
পুলিস জানিয়েছে, এদিন সকাল থেকে ভট্টাচার্য পরিবারের ফ্ল্যাটের কোলাপসিবল ও কাঠের গেটটি বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত কারও কোনও সাড়াশব্দ না মেলায় প্রতিবেশীরা পুলিসকে খবর দেন। পুলিস এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে, তিনজনের নিথর দেহ ঝুলছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মৃতদেহ তিনটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন