রাঁচি: জেলার নাম গুমলা। ২০০০ সালের গোড়াতেও ঝাড়খণ্ডের এই এলাকার বাতাসে ভাসত পোড়া বারুদের গন্ধ। মাঝেমধ্যেই গুলির লড়াই। রক্ত, মৃত্যু, গোলাবারুদ, আগ্নেয়াস্ত্র। এগুলিই ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে একের পর এক দেহ বেরিয়ে আসত। কিন্তু মাথা থেকে বেরত না তথাকথিত ‘বিপ্লবের’ ভাবনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুমলার সেই দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে বদল এসেছে। আগ্নেয়াস্ত্র ছেড়ে স্থানীয়দের অনেকেই ফিরেছেন সমাজের মূল স্রোতে। মাধ্যম মাছ চাষ। সরকারি সাহায্যে আজ কেউ মাছ ধরার জালের ব্যবসায় নেমেছেন। কারও মাছের খাবার তৈরির মিল রয়েছে। কেউ আবার একের পর এক জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন। এর সুবাদে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার হাত ধরে গত কয়েকবছরে জেলার ৮-৯ হাজার পরিবার মাছ চাষ শুরু করেছে। যা জেলার পুরো ছবিটাই বদলে দিয়েছে। আর এর জেরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার তালিকা থেকেও নিজেকে মুছে ফেলেছে গুমলা। এখন সেখানে বোমাগুলির আওয়াজ কমে এসেছে। বরং কানে আসে স্কুলে যাওয়া আসার পথে খুদে পড়ুয়াদের কোলাহল।
২০০২ সালে মাওবাদী দল ছেড়েছিলেন জ্যোতি লাকড়া। এখন তিনি মাছের খাবারের মিল চালান। গতবছর সেখান থেকে আয় হয়েছে ৮ লক্ষ টাকা। একই গল্প লখন সিং, ওমপ্রকাশদেরও। একসময় মাওবাদীদের সমর্থক লখন সিংয়ের কথায়, ‘মাছ চাষ বেশ লাভজনক। পাঁচটি পুকুর রয়েছে। এই আয় থেকেই সংসার চলে। ছেলে-মেয়েদের পড়ার খরচ চালাই।’ ২০০৭ সাল পর্যন্তও মাওবাদীদের দলে ছিলেন ওম প্রকাশ সাহু। এখন ছ’টি পুকুরে বছরে ৪০ কুইন্টাল মাছ চাষ করেন তিনি।
জেলার ১২টি ব্লকে প্রায় ৪ হাজার ৩৬০টি পুকুরের মধ্যে ৩৬০টি সরকারি। সবগুলিতেই বিভিন্ন ধরনের মাছের চাষ করা হয়। বন্দুক বদলার কথা বলে। অন্ধকার আনে। আর স্বনির্ভরতা, সমাজের মূল স্রোতে ফেরার তাগিদ সেই অন্ধকার সরিয়ে আলোর দিকে নিয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন