তেল আভিভ: ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর বদলা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’। ইজরায়েলের আক্রমণে পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস ও সেনা সর্বাধিনায়কের মৃত্যুর পর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। শুক্রবারের নামাজের পর ইরানের কোম শহরে ঐতিহ্যবাহী জামকারান মসজিদ চূড়ায় ওড়ানো হয় লাল পতাকা। সেটাই ছিল যুদ্ধ ঘোষণা! আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইজরায়েলের উপর প্রত্যাঘাত হানল ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্প (আইআরজিসি)। রাতভর একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলায় কেঁপে উঠল ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভ। এছাড়া রিশন লেজিয়ন ও রামাত গান এলাকাতেও হামলা চালায় তেহরান। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় জেরুজালেমেও। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই আইআরজিসি জানিয়ে দেয়, তারা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ শুরু করেছে। যতদিন প্রয়োজন হবে, এই অভিযান চলবে। রাতে পাল্টা হামলা শুরু করে ইজরায়েলও। জানা গিয়েছে, ইরানের দক্ষিণ পারসে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারের আঘাত হানে ইজরায়েলি মাইক্রো ড্রোন।
ইরান হামলা করতেই ইজরায়েলের বিভিন্ন শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। সক্রিয় হয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘আয়রন ডোম’। রাতের আকাশে তখন কার্যত ‘আগুনের খেলা’। ইজরায়েলি সেনার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইরান চার ধাপে অন্তত ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ‘আয়রন ডোম’ এই অতর্কিত হামলা পুরোপুরি ঠেকাতে পারেনি। ফলে রাজধানী তেল আভিভ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আছড়ে পড়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। আইআরজিসির প্রধান টার্গেট ছিল ইজরায়েলের ‘পেন্টাগন’ বলে পরিচিত তেল আভিভের কিরয়া এলাকা। এখানে রয়েছে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) সদর দপ্তর। গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হেডকোয়ার্টারও নাকি ওই জনবহুল এলাকায় অবস্থিত বলে জল্পনা। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, অন্তত একটি মিসাইল কিরয়ায় অবস্থিত মার্গানিট টাওয়ারে আঘাত করেছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তিনজন ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০। ইজরায়েলি সেনার দাবি, তাদের সাতজন সদস্য সামান্য আহত হয়েছে। একাধিক ফুটেজে বিস্ফোরণে তেল আভিভের একাধিক বহুতল ভেঙে যেতে দেখা গিয়েছে। রামাত গান এলাকার অন্তত নয়টি বহুতলের ক্ষতি হয়েছে। রাস্তায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে প্রচুর গাড়ি। ইরান দাবি করেছে, তারা ইজরায়েলের তিনটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে। ধরা পড়েছে দুই পাইলটও। যদিও সেই দাবির সত্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে ইজরায়েলের দাবি, শুক্রবার রাতভর তারাও ইরানে আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৬০ জন ইরানি নাগরিকের মৃত্যুর খবর মিলেছে, যার মধ্যে ২০ জন শিশু। এছাড়া ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীরও মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ গিয়েছে ইরানের আরও দুই শীর্ষ সেনাকর্তার। যদিও সংঘাত বন্ধের কোনও ইঙ্গিত দেয়নি দু’পক্ষই। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, খামেনেই যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না করেন, তাহলে তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। চুপ করে থাকেনি তেহরানও। তারা জানিয়েছে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশকে সাহায্য বন্ধ না করলে এবার পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত ব্রিটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্সের সেনা ঘাঁটিতে হামলা হবে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা এই ঘাঁটিগুলি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে। ফলে ইজরায়েলের সাহায্যকারীদের রেহাই দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এর মধ্যেই ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
রবিবার আমেরিকার সঙ্গে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তেহরান জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার কোনও প্রশ্ন নেই। এর মধ্যেই জল্পনা ছড়ায় হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। বাণিজ্যের জন্য এই সমুদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়বে। যদিও তেহরানের তরফে এনিয়ে কিছু জানানো হয়নি। দু’পক্ষকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানান পোপ চতুর্দশ লিও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন