নয়াদিল্লি: জুন, ২০২৩। ওড়িশায় বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে হাওড়া করেমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় একটি পণ্যবাহী ট্রেনের। সংঘর্ষে ছিটকে যাওয়া একের পর এক কোচে ধাক্কা লাগে পাশের লাইন দিয়ে ছুটে যাওয়া বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের সঙ্গে। ফল—প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু। আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষ।অক্টোবর, ২০২৩। অন্ধ্রপ্রদেশে দু’টো প্যাসেঞ্জার ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ। বেলাইন দু’টো ট্রেন। মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৭। আহত ৬০ জনেরও বেশি যাত্রী।
জুন, ২০২৪। কাটিহার রেলওয়ে ডিভিশনে রাঙাপানির কাছে দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। আগরতলা থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার সময় পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ। কমবেশি ১০ জন যাত্রীর মৃত্যু এবং প্রায় ৫০ জন আহত।
অক্টোবর, ২০২৪। চেন্নাইয়ে মাইসুরু-দ্বারভাঙা বাগমতি এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ির সংঘর্ষ। এক্ষেত্রে অবশ্য ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন প্রত্যেক রেল যাত্রীই। আহত প্রায় ২০ জন।
সাম্প্রতিক সময়ের এই সবক’টি ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে অন্যতম প্রধান মিল একটিই—প্রতিটিতেই দুর্ঘটনার পর সামনে এসেছে রেলের প্রযুক্তিগত ত্রুটি। কোথাও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় গোলযোগ। কোথাও আবার রেললাইন বিভাজনের টেকনিকে গলদ। বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় অবশ্য অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তাতে সরকারিভাবে সিলমোহর পড়েনি। চেন্নাইয়ে মাইসুরু-দ্বারভাঙা বাগমতি এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে যেমন মেইন লাইনে ‘থ্রু’ করার সঙ্কেত থাকলেও প্রযুক্তিগত ত্রুটিতে ট্রেনটি পাশের লুপ লাইনে চলে গিয়েছিল। সেখানেই দাঁড়িয়েছিল পণ্যবাহী ট্রেন। একের পর এক প্রযুক্তিগত ত্রুটি। আর সেই কারণে আমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে রেলেও।
রেলমন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার আমেদাবাদের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে তারাও! রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্তের মতো প্রিমিয়াম ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার সমস্ত মেল, এক্সপ্রেসের প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের পরিকল্পনা করছে রেল বোর্ড। তালিকায় রয়েছে হালের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও। এই প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে ট্রেনের লোকোমোটিভ অথবা ইঞ্জিনের পরীক্ষানিরীক্ষা। প্রাথমিকভাবে রেল বোর্ড স্থির করেছে, মূল্যায়নের সময় সামান্যতম প্রযুক্তিগত ত্রুটিও যদি ধরা পড়ে, তাহলে সেই ট্রেনকে সাময়িকভাবে বসিয়ে দেওয়া হবে। পাঠানো হবে ওয়ার্কশপে। সেখানে পরীক্ষার পর ফিটনেস সার্টিফিকেট মিললে তবেই ট্র্যাকে নামবে সেই ট্রেনের রেক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন