নয়াদিল্লি: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত ক্ষত এখনও দেশবাসীর মনে দগদগে। সেই হামলায় জঙ্গিদের সাহায্যকারী হিসেবে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছিল ভারত। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল বলেও দাবি করে নয়াদিল্লি। ভারতের সেই দাবিকেই যেন মান্যতা দিল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)। সোমবার পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার কড়া নিন্দা করে জানানো হয়েছে, আর্থিক মদত ছাড়া এই ধরনের হামলা চালানো সম্ভব নয়। জঙ্গি কার্যকলাপে আর্থিক মদত রুখতে নজরদারি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে এফএটিএফ। আর এই ঘোষণার ফলে ফের এফএটিএফের ধূসর তালিকায় পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন। এর পরেই হামলাকারী জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে ফের পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলে ভারত। সেই দাবির সপক্ষে বিশ্বের দরবারে প্রমাণ তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে যান ভারতীয় সাংসদদের একাধিক প্রতিনিধি দল। তার কিছুদিনের মধ্যেই পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করল এফএটিএফ। সোমবার বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ‘আর্থিক মদত ছাড়া এই ধরনের হামলা সম্ভব নয়। এর অর্থ জঙ্গিদের মদতদাতারা টাকা সরবরাহ করছে।’ এফএটিএফ আরও জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদতের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। একসঙ্গে কাজ করলেই এই সমস্যা মেটানো সম্ভব।’
সন্ত্রাসবাদের ভরকেন্দ্র পাকিস্তান। সেখানেই বেড়ে উঠেছে একের পর এক জঙ্গি সংগঠন। বারবার এই অভিযোগ তুলেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, ইসলামাবাদকে ৭০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান ঘিরে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের (আইএমএফ) কাছে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল নয়াদিল্লি। এই আবহেই আগামী ২৫ আগস্ট বৈঠকে বসতে চলেছে এফএটিএফের এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ। অক্টোবরে রয়েছে প্লেনারি মিটিং। এই উপলক্ষ্যে পাকিস্তান নিয়ে একটি ডসিয়ার তৈরি করছে ভারত। আর্থিক তছরুপ ও সন্ত্রাসবাদের পক্ষে আর্থিক মদত রুখতে একাধিক আইন তৈরি করেছে এফএটিএফ। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তা লঙ্ঘন করে চলেছে ইসলামাবাদ। ডসিয়ারে তার উল্লেখ থাকবে। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে ফের ‘ধূসর’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার আর্জিও জানাবে ভারত।
উল্লেখ্য, অর্থ তছরুপ ও সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নজরদার সংগঠন এফএটিএফ ২০১৮ সালের জুনে পাকিস্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল ধূসর তালিকায়। এর ফলে কার্যত দেউলিয়া ইসলামাবাদের সামনে আন্তর্জাতিক লগ্নি ও আর্থিক সহায়তার পথ বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়। চাপে পড়ে সেই সময় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগ থাকা লোকজনের জেল-জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করে পাক প্রশাসন। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে এফএটিএফের ধূসর তালিকার বাইরে বেরতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। তারই ‘সুফল’ হিসেবে গত বছর আইএমএফের কাছ থেকে ৭০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্যাকেজ পায় শাহবাজ শরিফের সরকার। পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার পথ মসৃণ হতেই ফের সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের খেলা শুরু করেছে পাকিস্তান। আর্থিক প্যাকেজের টাকা ঘুরপথে যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন