নয়াদিল্লি: শুধুই আমেদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ নয়। এয়ার ইন্ডিয়ার এই ড্রিমলাইনার সহ প্রায় সব সংস্থার বিমানই কোনও না কোনওভাবে ‘টেকনিক্যাল ফল্ট’-এর শিকার হয়ে চলেছে। কোনও সংস্থা কম, কোনওটা বেশি। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিয়ে খোদ মোদি সরকারের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকই সংসদে জানিয়ে দিয়েছিল, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি এড়ানো যাচ্ছে না। তাদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমান সংস্থাগুলির মধ্যে টেকনিক্যাল ফল্টে সবার আগে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এক বছরে এই সংস্থার ‘ফল্ট’ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। তালিকায় ইন্ডিগো, এয়ার এশিয়া, আকাশ সহ সবার নামই রয়েছে। অভিযোগের বাড়তি বোঝা অবশ্য চাপানো হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার উপরই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শুধু পরিসংখ্যানেই শেষ কেন? এমন উদ্বেগজনক রিপোর্ট পেয়েও কেন উদাসীন রয়ে গেল কেন্দ্র?
জানা যাচ্ছে, গত ৩ এপ্রিল সংসদে বিভিন্ন সংস্থার বিমানে ‘টেকনিক্যাল গ্লিচ’ বা প্রযুক্তিগত ত্রুটি প্রসঙ্গে লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন লোক জনশক্তি পার্টির (রামবিলাস) লোকসভার সাংসদ অরুণ ভারতী। তারই জবাবে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরলীধর মোহল জানান, বিগত তিন বছরে সারা দেশে বিভিন্ন বিমানের প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকলেও তা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই আটটি বেসরকারি বিমান সংস্থার পরিসংখ্যান পেশ করেন মন্ত্রী। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে টেকনিক্যাল ফল্টের সংখ্যা ছিল ৬২টি। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪টি। ইন্ডিগোর বিমান ডোমেস্টিকে চলে সবচেয়ে বেশি। ২০২২ থেকে দু’বছরে ফ্লাইট সংখ্যা তারা বাড়ানোর পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রুটির সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। একই ‘সাফল্য’ স্পাইস জেটেরও। তাদের উড়ান সংখ্যা অবশ্য তিন বছরে কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে ৭১৭টি, ২০২৩ সালে ৩৮৬টি এবং ২০২৪ সালে ৩২৩টি এমন গোলযোগ চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এই কমে আসাটা যথেষ্ট নয়। তাহলে ফ্লাইট লেট, বদল এবং সর্বোপরি দুর্ঘটনাই ঘটত না। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, যান্ত্রিক ত্রুটির ক্ষেত্রে সরকার কেন আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন হয়নি? সেক্ষেত্রে আমেদাবাদ দগদগে ঘায়ের মতো ভারতের ইতিহাসে চেপে বসত না।
কেন্দ্রের রিপোর্টে এয়ার ইন্ডিয়ার পরিসংখ্যানই সবচেয়ে শোচনীয় কেন? সরকারের থেকে হস্তান্তরের পর মাত্র তিন বছর হাতে পেয়েছে টাটা গোষ্ঠী। পরিষেবা এবং রক্ষণাবেক্ষণ— দু’টি ক্ষেত্রেই ধুঁকছিল সংস্থাটি। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়াতে হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়াকে। কারণ, তা না হলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হতো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু বিমান চলাচলে শত শত মানুষের প্রাণ নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়, তাই রক্ষণাবেক্ষণে ন্যূনতম সন্দেহ থাকলেও সেই বিমান ‘গ্রাউন্ড’ করে দেওয়া উচিত। আমেদাবাদের ড্রিমলাইনারের ক্ষেত্রেও কি তেমন কোনও সংশয় ছিল? না হলে সংস্থা বা রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা বিমানটিকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিল কীভাবে? উত্তর মিলবে। তদন্ত শেষ হলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন