কলকাতা: ব্যাপক অনিয়ম করেও একাধিক ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্য নিয়মিত পেয়ে চলেছে ১০০ দিনের কাজের টাকা। কিন্তু কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া নানা শর্ত মেনে, দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের পরও ধারাবাহিক বঞ্চনার শিকার হয়ে চলেছে বাংলা। রাজ্যের দাবি, মোট ১৫৬টি কেন্দ্রীয় দল এসে ছানবিন চালালেও দুর্নীতির প্রমাণ না পেয়ে ক্লিনচিট দিয়েছে তারা। তারপরও ২০২২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এই খাতে বাংলার মানুষ ৩৮ হাজার কোটি টাকার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের তোপ দাগলেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। তাঁর সাফ বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের ৩৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে কেন্দ্র। সোমবার রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বিধানসভায় এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরার পরই সুর সপ্তমে তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে বাংলার বরাদ্দ আটকে রেখেছে। বাংলার টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য রাজ্যকে। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতে এই প্রকল্পে প্রচুর অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেখানে ক’টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে?’
এই খাতে ২০২২-এর আগের প্রায় ৬৯১৯ কোটি টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। এর মধ্যে জবকার্ড হোল্ডারদের মজুরি বাবদ বকেয়া ছিল ৩,৭৩১ কোটি। বাধ্য হয়ে সেই মজুরি মেটাতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ না থাকায় বিকল্প হিসেবে রাজ্য সরকার ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করে। আবাস যোজনা এবং সড়ক যোজনার টাকা না দেওয়া নিয়েও এদিন কেন্দ্রকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র মহারাষ্ট্র, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাডুতে (এটি অবিজেপি রাজ্য) এই খাতে ১৪২ কোটিরও বেশি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। অথচ, ওই রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ তো দূরের কথা, উল্টে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে বাংলার প্রাপ্য টাকাই এই চার রাজ্যকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিহার-তামিলনাড়ুতে সামনেই ভোট। আর গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশ হল বিজেপির ‘নিজেদের রাজ্য’। তাই বাংলার ‘সর্বনাশ’ এই রাজ্যগুলির ‘পৌষমাস’ ডেকে এনেছে! উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ৬ বছরে রাজ্যের জন্য ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্প খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ৫০,৫৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৯.২০ কোটি টাকার কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তারপরও রাজ্যকে বরাদ্দ না দেওয়ায় বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ মনোভাব এবং রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাই প্রমাণিত হল বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন