
কলকাতা: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল মঙ্গলবার নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরের একাংশে প্রবেশ করার পাশাপাশি আন্দমান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্তও তৈরি হয়েছে। মে মাসের এইসময়ে আন্দমান সাগরে কোনও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে সেটি শক্তি বৃদ্ধি করার আশঙ্কা থেকেই যায়। বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলি মে মাসে তৈরি হয়। তার সূচনা হয় এই ধরনের ঘূর্ণাবর্ত থেকে। ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার প্রচার শুরু হয়েছে। ওড়িশা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মধ্যে কোনও জায়গায় এটি উপকূল অতিক্রম করবে এমনটাও বলা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর অবশ্য এখনও এই ধরনের কোনও সম্ভাবনার কথা জানায়নি। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, আন্দমান সাগর-বঙ্গোপসাগরে বর্ষা প্রবেশ করার পর এই ধরনের ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকে। ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে সেটি থেকে ঘূর্ণিঝড় হবেই এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ঘূর্ণিঝড় তৈরির আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন
বিষয়ের উপর নজর রেখে দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আবহাওয়া
দপ্তরের রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেওরোলজিক্যাল সেন্টার (আরএসএমসি) নামে
একটি বিশেষ শাখা আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার আরএসএমএস আবহাওয়ার সম্ভাব্য হাল
হকিকত নিয়ে দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস জারি করে। গত বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে
জানানো হয়, আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার কয়েকটি গাণিতিক মডেল ১৫ তারিখের পর
বঙ্গোপসাগরে একটি সিস্টেম তৈরি হওয়ার কথা বলেছে। ‘সাইক্লোজিনেসিস’ (অন্তত
গভীর নিম্নচাপ হওয়া) হবে, এমন সম্ভাবনা আছে বলে ওই সিস্টেমটি থেকে জানানো
হয়। কোনও কোনও মডেল এটির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে। একটি
মডেল জানিয়েছিল ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশা উপকূলের দিকে যাবে। অন্য একটি মডেল এটির
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে যাওয়ার সম্ভবনা কথা বলেছিল। আগামী কাল
বৃহস্পতিবারের আরএসএমসির দীর্ঘকালীন পূর্বভাসে আরও কিছুটা নির্দিষ্ট তথ্য
পাওয়া যাবে বলে আবহাওয়াবিদরা আশা করছেন।
সাম্প্রতিক অতীতে ওড়িশা,
পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ থেকে মায়ানমার পর্যন্ত উপকূলে মে মাসে একাধিক
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার নজির আছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় উম-পুন ও
যশ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল বঙ্গে। তারপর রেমাল, দানা-সহ কয়েকটি
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল রাজ্যে। আবহাওয়াবিদরা বলেন, প্রাকবর্ষা মরশুমে
এপ্রিল-মে মাসে বঙ্গোপসাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে সেটির ওড়িশা
পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ মায়ানমার উপকূলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অন্যদিকে বর্ষা-পরবর্তীকালে (অক্টোবর-নভেম্বর) বঙ্গোপসাগরে কোনও
ঘূর্ণিঝড় হলে সেটির অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ুর দিকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এর
ব্যতিক্রমও অবশ্য হয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, সেটা এখনও অনিশ্চিত
হলেও আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বজ্রগর্ভ মেঘ
থেকে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পাশাপাশি
পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ ও দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্র চড়া গরম থাকবে।
ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ অক্ষরেখার জন্য বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন