কলকাতা: এ যেন পরতে পরতে রহস্য। ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতিরানি মালহোত্রার কর্মকাণ্ডের তদন্তে প্রায় প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর এবার পশ্চিম থেকে সরাসরি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত। কারণ তার অরুণাচল সফর। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাকিস্তান ও চীনের নির্দেশেই উত্তর-পূর্বের এই স্পর্শকাতর রাজ্যে ‘হানা দিয়েছিল’ এই লাস্যময়ী চর। আইএসআইয়ের পাশাপাশি চীনা গুপ্তচর সংস্থা গোয়ান বু’র সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। আর সেই তথ্য হাতে আসতেই ঘুম উড়েছে তদন্তকারী পুলিস ও গোয়েন্দা কর্তাদের। কারণ কাশ্মীর, লাদাখের পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশেও একাধিকবার গিয়েছিল হরিয়ানার এই ট্রাভেল ভ্লগার।
কী ধরনের স্পর্শকাতর তথ্য চীনে পাচার করেছিল জ্যোতি? তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হিসার পুলিসের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে দু’বার অরুণাচল প্রদেশে গিয়েছিল জ্যোতি। ট্রাভেল ভ্লগিংয়ের জন্য। এখানে আপাতদৃষ্টিতে কোনও রহস্য নেই। কিন্তু তার আগের বছর হরিয়ানার এই লাস্যময়ী গিয়েছিল পাকিস্তান সফরে। জ্যোতি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে পাকিস্তান সফরের সময় আইএসআইয়ের জনৈক কর্তা তার সঙ্গে সেদেশে কর্মরত চীনের এক আধিকারিকের পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই ব্যক্তি আসলে চীনা গুপ্তচর সংস্থা গোয়ান বু’র কর্তা। সেখানেই আইএসআই ও গোয়ান বু’র দুই কর্তার সঙ্গে বৈঠক হয় জ্যোতির। তাঁদের ‘পরামর্শ’ মেনে পরের বছরই নয়াদিল্লি থেকে ভিয়েতনাম হয়ে সাংহাই পৌঁছয় সে। চীনের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ভ্লগিংয়ের ফাঁকেই পাকিস্তানে কর্মরত গোয়ান বু’র ওই চরের সঙ্গে দেখা করে জ্যোতি। উপস্থিত ছিল সংস্থার আরও তিন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। দেশে ফিরে জ্যোতিকে কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, তার রূপরেখা ঠিক করে দেওয়া হয়।
জেরার মুখে জ্যোতি জানিয়েছে, অরুণাচল প্রদেশে লাল ফৌজের যে কোনও ধরনের আগ্রাসন রুখতে ভারতীয় সেনাবাহিনী সর্বদাই ‘হাই অ্যালার্টে’ থাকে। জ্যোতিকে সেই সমস্ত জায়গায় যাওয়ার ‘টাস্ক’ দেওয়া হয়েছিল। ওই সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকার কোথায় কোথায় ভারতীয় সেনার আউটপোস্ট রয়েছে, তাদের কাছে কী কী অস্ত্র-গাড়ি রয়েছে, সেই সম্পর্কে তথ্য জানাতে বলা হয়। শুধু তাই নয়, ওই জায়গাগুলির রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন, সেনাবাহিনী মূলত কোন কোন রাস্তা ব্যবহার করে, বা ওই রাস্তা ধরে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতে আনুমানিক কত সময় লাগতে পারে, তা নিয়েও বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলা হয় এই ট্রাভেল ভ্লগারকে।
এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহের জন্যই গত বছর দু’বার অরুণাচলে গিয়েছিল জ্যোতি। চীনের গুপ্তচর সংস্থার চাহিদামতো অরুণাচলের ছবি ও ভিডিও তুলে তাদের পাঠিয়েছিল সে। তবে এখানে আরও একটা চমক রয়েছে। যে নম্বরে জ্যোতি ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছে, সেটাও একটি ভারতীয় নম্বর। হরিয়ানা পুলিসের টানা জেরার মুখে ধৃত জানিয়েছে, ওই নম্বরটি ভারতীয় হলেও আদতে তা ব্যবহার করেন চীনা গুপ্তচর সংস্থার এক আধিকারিক।
জ্যোতিকে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ভিসা বানিয়ে দিয়েছিল হরকিরত নামে এক ব্যক্তি। ঘটনার তদন্তে হরিয়ানা পুলিসের স্ক্যানারে কুরুক্ষেত্রের ওই বাসিন্দাও। ইতিমধ্যে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘ জেরা করেছেন তদন্তকারীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন