নয়াদিল্লি: তার নাম কখনও গঙ্গান্না, কখনও প্রকাশ। কেউ তাকে চেনে কৃষ্ণ নামে, কেউ আবার বিজয় হিসেবে। কারও কাছে সে দারাপু, কারও কাছে নরসিংহ। প্রকৃত নাম— নামবালা কেশব রাও। যদিও তিনি বিখ্যাত ছদ্মনামে, বাসবরাজু। সিপিআই (মাওবাদী) দলের সবথেকে রহস্যময় নেতা, ২০১৮ সাল থেকে সুপ্রিম কমান্ডার, পার্টির সাধারণ সম্পাদক সেই বাসবরাজু অবশেষে খতম। বস্তারের চার জেলার পুলিস বাহিনী নিয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি) ফোর্স মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নেমেছিল অভিযানে। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকা, অরণ্য ও পাহাড়ে ঘেরা অবুঝমাড়ে রোমহর্ষক এক এনকাউন্টারে তারাই খতম করেছে ৬৮ বছর বয়সি বাসবরাজু সহ ২৭ জন মাওবাদীকে। নিহত তালিকায় আর উল্লেখযোগ্য নাম, ‘জঙ্গ’ নামক মাওবাদী পত্রিকার পরিচালক নবীন এবং জোনাল কমিটির অন্যতম শীর্ষ নেতা মধু। বাসবরাজুর মৃত্যুকে সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন কোবরা কমান্ডো বাহিনী এবং ডিআরজি ফোর্সকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, এই তিন নেতাকে খতম করে দেওয়ায় মাওবাদীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেল। এবার মাওবাদীদের শেষের শুরু।
মঙ্গলবার নারায়ণপুর জেলা পুলিসের কাছে তেলেঙ্গানার এক ইনফর্মার মারফত খবর এসেছিল, কোনও অপারেশন অথবা মিটিংয়ের জন্য অবুঝমাড়ের মাড় অঞ্চলে সম্মিলিত হয়েছে মাওবাদীরা। তাদের উদ্দেশ্য জানা যাচ্ছে না। জায়গাটা ইন্দ্রাবতী ন্যাশনাল পার্কের কাছেই। এমনিতে নারায়ণপুর জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ অরণ্য ও পাহাড়। সিংহভাগ অংশই পুলিস ও প্রশাসনের কাছে অগম্য। জেলাসদর ও ব্লকগুলি থেকেও বহু দূরে উপজাতিদের গ্রাম। সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে ল্যান্ডমাইন। রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা হলেও বারবার বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়। আর অবুঝমাড় হল, মাওবাদীদের দক্ষিণ দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির সবথেকে বড় মুক্তাঞ্চল। পাহাড় এবং জঙ্গলে ঘেরা। ইনফর্মার সবথেকে মূল্যবান যে সংবাদটি দিয়েছিল, সেটি হল, বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা নাকি আছে এই সমাবেশে। খবর পেয়ে রাতেই রওনা হয় বস্তারের চারটি জেলার ডিআরজি ফোর্স। প্রায় মাঝরাতে ইন্দ্রাবতী ন্যাশনাল পার্ক পেরিয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করতেই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে। ডিআরজি ফোর্স তৎক্ষণাৎ বুঝে যায় খবর সত্য। সেই মাঝরাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রবল সংঘর্ষ চলে বস্তারের পুলিস ও নিরাপত্তা বাহিনী বনাম মাওবাদীদের। বেলা বাড়তে অবশেষে জানা যায়, এনকাউন্টারে যে মাওবাদীদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম বাসবরাজু।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? গণপতি, কিষেনজির সঙ্গেই এলটিটিই ফোর্সের কাছে ট্রেনিং নেওয়া এই বাসবরাজুই ছিল শেষ সক্রিয় গেরিলা নেতা। সেই জেনারেল সেক্রেটারি, ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ খতম! খতম মাওবাদী আতঙ্কও!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন