খেয়াল রাখুন সমাজমাধ্যমে সন্তান কী করছে - Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Breaking

Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Aaj Bikel is currently West Bengal's leading, popular, authentic and trustworthy digital media. Aaj Bikel News has become the voice of crores of readers and viewers.

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

খেয়াল রাখুন সমাজমাধ্যমে সন্তান কী করছে

 খেয়াল রাখুন সমাজমাধ্যমে সন্তান কী করছে

সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যম আধুনিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার এর অনবরত ব্যবহার আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিও করতে পারে। বিশেষত কৈশোরে সচেতনতা জরুরি। এই বয়সটাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘ইমপ্রেশনেবল এজ’। যে কোনও ঘটনাই এই বয়সে মনকে বেশি প্রভাবিত করে। ফলে এই বয়সে সমাজমাধ্যমের অবাধ ব্যবহার বাচ্চাদের জীবনে নানা ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। অতএব বাবা মাকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাঞ্জন পান।

 সোশ্যাল মিডিয়া ও স্ক্রিন টাইম
সমাজমাধ্যম খুব সহজেই আমাদের আকৃষ্ট করে। ঝলমলে ছবি, দারুণ কনটেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে তা একটা কল্পনার জগৎ তৈরি করে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই সেই অমোঘ টানে শিকার হন। কিন্তু এর ফলে বাচ্চাদের মানসিক বেশ কিছু ক্ষতি হয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে বাচ্চাদেরই কেন শুধু তা হয়? কারণ তাদের মন অপরিণত। সেই মনের উপর সহজে প্রভাব ফেলা যায়। ফলে সচেতন হতে হবে বাবা মাকে। 

 গার্বেজ থেকে সাবধান
ইংরেজি ভাষার এই শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার অসচেতন ব্যবহারের ফলে এই গার্বেজ বা আবর্জনার সঙ্গে বাচ্চার সংযোগ বেড়ে যায়। এমন অনেক জিনিস সে দেখতে পায় যা তার দেখার নয়। এর ফলে তার জীবনের দু’রকম প্রভাব ঘটে। প্রথমত সে অলীক এক দুনিয়ায় বিচরণ করতে শুরু করে। সিনেমার জগৎটাকেই বাস্তব ভেবে নেয়। এবং তার সঙ্গে বাস্তবের অমিল হলে অহেতুক হতাশার শিকার হয়। এ থেকে বাচ্চাটির বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত, কিছু খারাপ ভাষা, বাজে কনটেন্টের সম্মুখীন হয় বাচ্চাটি। তার নিত্যদিনের কথা বলাতেও এর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় সে ক্লাসমেট বা বন্ধুর উপর খবরদারি শুরু করে। বয়ঃসন্ধিতে এই বিষয়টা সম্পর্কে বাবা মায়ের সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চার মন অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে কি না, সেটা বুঝতে হবে। বাচ্চাটি সমাজমাধ্যমে কী দেখছে সে বিষয়ে বাবা মাকে সচেতন থাকতে হবে। 

 বয়ঃসন্ধির সমস্যা
বাচ্চা যতক্ষণ শিশু, ততক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং বেশ সহজ। বাবা মা কিছু নিয়ম জারি করতে পারেন অনায়াসে। সেই নিয়মগুলো বাচ্চাকে মেনে চলতে বলাও খুব একটা কঠিন নয়। সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন বাচ্চা বারো পেরিয়ে টিনএজার হয়ে ওঠে তখন তার মন সঠিক অর্থে পরিণত হয় না কিন্তু বড়দের সব কথা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতেও মন সায় দেয় না। এছাড়াও সমাজমাধ্যমের কিছু প্রয়োজনীয়তাও তখন তার জীবনে দেখা দেয়। পড়াশোনার কাজে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে হয়। ফলে সমাজমাধ্যম থেকে এই বয়সের বাচ্চাকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। অথচ সমাজমাধ্যমের ক্ষতিকর দিকগুলো তো আর মুছে যায় না। ফলে বাবা-মায়ের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। তাঁরা আগে দেখে নেবেন বাচ্চার পড়াশোনার কাজে যে ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট দেখার দরকার পড়ছে তা সঠিক কি না। সেই অনুযায়ী বাচ্চাকে তা ব্যবহার করতে দেবেন। এছাড়া বাচ্চার ব্যবহারের সময়ও বেঁধে দিতে হবে। পড়ার সময় ছাড়া অন্য কোনও সময় তা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। বাচ্চা যদি খেলার মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে স্ক্রিন টাইমের সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে বাবা মাকে। কোন সাইট সে দেখছে বা কোন সাইটে খেলছে, সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। 

 খোলামেলা কথা বলা
বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানের কম্পর্ক কতটা সহজ ও খোলামেলা সেটাও এই সমাজমাধ্যম ব্যবহার ও তার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার সঙ্গে বাবা মায়ের সম্পর্ক যদি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, সে যদি অকপটে তার মনের সব কথা বাবা বা মায়ের কাছে খুলে বলতে পারে তাহলে সমাজমাধ্যম ব্যবহার থেকে বাচ্চার বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে। সমাজমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবা মাকে কিছু জিনিস বাচ্চার কাছে স্পষ্ট করে দিতে হবে। এই মাধ্যম সব ক্ষেত্রে সত্য বা বাস্তব ছবি বহন করে না। এই মাধ্যমে ভালোর সঙ্গে মন্দেরও ভাগ রয়েছে। এবং প্রয়োজনীয় কনটেন্টের পাশাপাশি যদি অপ্রয়োজনীয় কিছুর সম্মুখীন তারা হয়, তাহলে তা এড়িয়ে যেতে হবে, বাবা মাকে সেই বিষয়ে জানাতে হবে এবং কীভাবে সমাজমাধ্যম ব্যবহার করলে গার্বেজ বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কম দেখা যাবে সে বিষয়ে জানতে হবে। এছাড়াও সন্তানের ব্যবহারে কোনও তারতম্য ঘটছে কি না, সে অযথা রেগে যাচ্ছে কি না, কম কথা বলছে কি না, যে কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক হচ্ছে কি না— এগুলো ভীষণ মনোযোগ সহকারে মা বাবাকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে। এবং সেই মতোই ব্যবস্থা নিতে হবে। 

 ক্ষতিকর দিকগুলো

 ক্রমাগত ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে এক জায়গায় বসে সোশ‌্যাল মিডিয়া ঘাঁটলে শরীর চালনা হয় কম। এর ফলে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী, মেদ জমার শঙ্কাও দেখা দেয়। 
 অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে দুটো জিনিস হয়। অপর্যাপ্ত ঘুম ও ঘুমের ব্যাঘাত। আসলে খুব বেশিক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে অমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার থেকে যে ঘুম পায় তাতেও কিন্তু সম্পূর্ণ রেস্ট হয় না। 
 এই যে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়া, ঘুম কম হওয়া, বিশ্রাম না হওয়া ইত্যাদির কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। সম্পূর্ণ মন দিয়ে পড়া তৈরি করা সম্ভব হয় না। 
 বাস্তব জীবনে যে ধরনের মেলামেশা বা সামাজিক জীবনযাত্রা সুস্থতার লক্ষণ, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম বা সোশ্যাল ঩মিডিয়া ব্যবহারের ফলে তারও ব্যাঘাত ঘটে। বাচ্চারা আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারে না। বাবা মায়ের সঙ্গেও একটা দূরত্ব তৈরি হয়। এর সবকিছুর জন্যই একটা মনিটরিং প্রয়োজন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Loading...