
গরম ভাত। এক চামচ গাওয়া ঘি, সঙ্গে স্বাদমতো নুন। এতেই খাওয়া শেষ। বাঙালি বাড়িতে চিরচেনা এই খাবার বড় তৃপ্তি দেয়। যে কোনও বয়সি মানুষ আনন্দ করে খেয়ে নেন ঘি-ভাত। রান্নায় এক চামচ ঘি স্বাদ বদলে দিতে পারে নিমেষে। শুধু বাঙালি নন, বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ ঘি অত্যন্ত উপাদেয় হিসেবেই গ্রহণ করেন। ঘি আপনি রূপচর্চার কাজেও লাগাতে পারেন।
রূপ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরা বলেন, ‘গরুর দুধের ঘি একটু মেড়ে নিতে হবে। হামানদিস্তায় দিয়ে ঘুরিয়ে নিলে দেখবেন ঘি একটু ঘন হয়ে আসে। তার সঙ্গে মালাই মিশিয়ে মুখে মাসাজ করলে ত্বকের জেল্লা বাড়বে। বলিরেখা মুক্ত টানটান ত্বক হয়ে উঠবে। স্নানের আগে প্রতিদিন এটা করতে পারেন। ত্বক ভালো থাকবে। ত্বক এবং চুলের পক্ষে ঘি খাওয়াও ভালো।’ কোন বয়সের মানুষ ঘি দিয়ে রূপচর্চা করবেন? শর্মিলার উত্তর, ‘২৫ বছর বয়স থেকে ঘি ব্যবহার করতে পারেন। তবে তৈলাক্ত ত্বকে ঘি ব্যবহার না করাই ভালো। তাহলে ব্রণর সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। সাধারণ, শুষ্ক, অত্যধিক শুষ্ক ত্বকে ঘি ব্যবহার করা ভালো। যাঁদের খুব ব্রণ হয়, তাঁদের ঘি ব্যবহার না করাই ভালো।’
শর্মিলার
পরামর্শ, ঘিয়ের সঙ্গে নানা উপকরণ মিশিয়ে ত্বকচর্চা করতে পারেন। যে কোনও
মরশুমি ফলের শাঁস মিশিয়ে নিন ঘিয়ের সঙ্গে। এছাড়া বেসন, গুঁড়ো দুধ, ময়দা,
পাকা পেঁপে, তরমুজ, কলা— নানা উপকরণের সমাহারে তৈরি করতে পারেন ঘরোয়া
প্যাক। এসব কিছুই ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। অন্তত ২০ মিনিট
রেখে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই ত্বক সুন্দর হয়ে উঠবে। শর্মিলার
কথায়, ‘ঘি মাখলে ত্বক পলিশ হয়। চালের গুঁড়োর সঙ্গে ঘি মিশিয়ে মাখলে ত্বক
এক্সফোলিয়েটও হবে।’
উপকারের ধরন
• ঘিয়ের মধ্যে ভিটামিন ডি এবং এ
রয়েছে ভরপুর। যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হিসেবে কার্যকরী। ইদানীং
জীবনযাপনের ধরন বদলেছে। ফলে অনেক কম বয়স থেকেই বলিরেখা পড়ছে ত্বকে। তা দূর
করার জন্য ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
• ময়েশ্চারাইজার যে কোনও ত্বকেই
প্রয়োজন। তবে শুষ্ক বা অতি শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার একাধিকবার ব্যবহার
করা ভালো। ঘি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। ত্বকে শুষ্কভাব বেশি হলে
ঘি দিয়ে তৈরি যে কোনও প্যাক ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ।
•
রোদ্দুরে বেরিয়ে কাজ করতে হয় প্রায় সকলকেই। বাড়িতে থাকলেও আগুনের সামনে
দাঁড়িয়ে কাজ করা হয়তো আপনার দৈনন্দিনের অভ্যেস। সানস্ক্রিন এক্ষেত্রে
বন্ধুর মতো কাজ করে। কিন্তু তাও ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। প্রতিদিনের দূষণ
থেকে ত্বকে ময়লা জমে যেন এক আস্তরণ তৈরি করে, তা থেকে স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য
হারিয়ে যায়। এই সমস্যা আপনার থাকলে খাঁটি ঘি ত্বকে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
প্রতিদিন এই অভ্যেস বজায় থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই ত্বক হারানো জেল্লা ফিরে
পাবে।
• ঘিয়ের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে। যা ত্বকের
নানাবিধ অ্যালার্জির হাত থেকে মুক্তি দেয়। তবে বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখবেন না।
শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে আপনার ত্বকের উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে
নিন।
• চোখের তলায় কালি পড়ে গেলে একেবারেই দেখতে ভালো লাগে না। উদ্বেগ,
টেনশন থেকে চোখের তলায় কালি পড়া এখন খুব সাধারণ সমস্যা। দু’ফোঁটা ঘি হাতের
আঙুলে নিয়ে হালকা হাতে চোখের নীচে মাসাজ করুন।
• শুধুমাত্র শীতকাল নয়,
ফাটা ঠোঁটের সমস্যায় এখন বছরভর জেরবার নানা বয়সের মানুষ। দিনভর এয়ার
কন্ডিশনে বসে কাজ করতে হয় অনেককে। আবার বাইরে রোদ্দুর থেকে হঠাৎ করেই এসির
ঠান্ডায় ঢুকতে অভ্যস্ত কেউ। ফলে ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে ঘি
কার্যকরী হতে পারে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন।
•
প্রতিদিন খাবার পাতে এক চামচ ঘি অথবা যে কোনও একটি পদ অল্প ঘি দিয়ে রান্না
করুন। পরিমিত ঘি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা
পেতে মেনুতে ঘি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। রোজ ডায়েট মেনে অল্প ঘি খেলে
শরীরে গুড ফ্যাট বাড়লেও ওজন বাড়ে না। সঙ্গে ব্যালান্সড ডায়েট ও শরীরচর্চা
আপনার সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন