
কলকাতা; যাঁর ‘পরামর্শে’ সারোগেসির সিদ্ধান্ত, তাঁর শুক্রাণুই আইভিএফ সেন্টারে! আবার সেই স্পার্মেই সন্তানের জননী ওই যুবতী! গোটা বিষয়টা কাকতালীয় বলে মনে করছেন না দিল্লির বাসিন্দা জাগৃতী সিং। পেশায় দন্ত চিকিৎসক এই যুবতী অভিযোগ ঠুকে দিয়েছেন বাংলার এক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে। শুধু নবান্ন নয়, অভিযোগনামা পৌঁছে গিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও। জাগৃতী সিংয়ের দাবি, ওই আইপিএস অফিসার প্রতারণা করেছেন তাঁর সঙ্গে। পুলিস কর্তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, হুমকি দেওয়া এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মতো অন্য অভিযোগও এনেছেন তিনি। আইপিএস অফিসারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সারোগেসি আইনের একাধিক ধারায়।
উত্তরপ্রদেশের বিএসপি সাংসদ ধনঞ্জয় সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জাগৃতীর। কিন্তু ওই বাহুবলী এমপির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর। তারপর থেকেই একাকীত্বে ভুগতেন দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের এই প্রাক্তন হাউজ স্টাফ। মাঝে তাঁর বিরুদ্ধে পরিচারিকা খুনের অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে তিনি অবশ্য জামিনে মুক্ত। জাগৃতীর দাবি, আদালতে বিচারাধীন সেই মামলার সূত্রেই ওই আইপিএস অফিসারের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। একাকীত্ব কাটাতে তিনিই নাকি সারোগেসির মাধ্যমে মা হওয়ার পরামর্শ দেন।
জাগৃতী সিং
জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ওই আইপিএসের সঙ্গে তাঁর
আলাপ-পরিচয়। ঘটনাচক্রে তাঁরা দু’জনেই উত্তরপ্রদেশের আদি বাসিন্দা। প্রথম
দিকে একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই মিশেছেন তিনি। কীভাবে খুনের মামলা থেকে
জাগৃতীদেবী রেহাই পাবেন, তার জন্য সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী
জাগৃতী সিংকে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজে সহায়তা করতে এরাজ্যের এক পুলিস
অফিসারকে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন ওই আইপিএস। পাশাপাশি, পরিচারিকা খুনের
মামলার ফরেন্সিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখার জন্য তিনি তাঁর বিশেষ পরিচিত
ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ আইপিএস-চিকিৎসকের সাহায্য নেন বলে দাবি
জাগৃতীদেবীর।
এভাবে যখন বিশ্বাসের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে, তখনই ‘সারোগেট মা’ হওয়ার পরামর্শ দেন আইপিএস। দিল্লির একটি আইভিএফ সেন্টারে যোগাযোগ করেন জাগৃতী সিং। তাঁর জীবনে সন্তানও আসে। কিন্তু তারপর থেকেই ওই পুলিসকর্তার আচরণে সন্দেহ জাগতে থাকে জাগৃতীদেবীর। নানা ঘটনাক্রম থেকে তাঁর মনে হয়, সন্তানের পিতৃপরিচয় জানতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনি নিঃসংশয় হন যে, বাংলার আইপিএসই তাঁর সন্তানের বাবা (যদিও এই ডিএনএ রিপোর্টের সত্যতা বর্তমান যাচাই করেনি)। এরপরই দন্ত চিকিৎসক জাগৃতী সিং ওই অফিসারের বিরুদ্ধে দিল্লির এক আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন আদালতে। পাশাপাশি, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের পরপর দু’বার নবান্নে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, আইজি পদমর্যাদার ওই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ই-মেল গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। জাগৃতীদেবী মেল করেছেন তৃণমূলের প্রভাবশালী এক সাংসদকেও।
কীসের ভিত্তিতে অভিযোগ? সারোগেসি আইন বলছে, আইভিএফ সেন্টার থেকে শুক্রাণু বা স্পার্ম নেওয়া যাবে। কিন্তু সেই স্পার্ম কার, তা কখনওই প্রকাশ করা যাবে না। জাগৃতী সিং প্রশ্ন তুলেছেন, দিল্লির আইভিএফ সেন্টারে বাংলার আইপিএসের শুক্রাণু এল কীভাবে? আর সেই স্পার্ম কি স্রেফ কাকতালীয়ভাবে তাঁর কপালে জুটল? অভিযোগকারিণীর প্রশ্ন, তাহলে কি পুলিস কর্তা প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে, পুত্র সন্তানের বাবা হওয়া বা কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা করিয়েছেন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন