
নয়াদিল্লি: আইনসভা তথা সরকার বনাম সুপ্রিম কোর্ট যুদ্ধ চরমে! উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকার মঙ্গলবার ফের খড়্গহস্ত শীর্ষ আদালতের উপর। বললেন, ‘পার্লামেন্ট সর্বোচ্চ। তার উপরে কেউ নয়।’ আবার এদিনই সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলা প্রসঙ্গে বলেছে, প্রতিষ্ঠানও (বিচার ব্যবস্থাও) প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে। তবু জেনে রাখুন, এসবে আমরা উদ্বিগ্ন নই। কর্ণাটকের একটি আদালত অবমাননার মামলায় এই মন্তব্য করেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর এই পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের পর তিনিই হবেন দেশের প্রধান বিচারপতি। তিনিই যখন আজকাল লাগাতার সুপ্রিম কোর্টকে আক্রমণের শিকার বানানোর কথা বলছেন, তাতে মোদি সরকারের অস্বস্তি বাড়বে।
বিরোধী
শাসিত রাজ্যগুলিতে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপাল অথবা রাষ্ট্রপতি আটকে
রাখছেন, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়ে ঐতিহাসিক
রায় দিয়েছে। তিন মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে জানিয়ে দিয়েছে যে,
রাষ্ট্রপতি-রাজ্যপাল অনির্দিষ্টকাল ধরে বিল আটকে রাখতে পারেন না। তারপরই
শুধু উপ রাষ্ট্রপতি নন, শাসক দল বিজেপির একের পর এক এমপি লাগাতার সর্বোচ্চ
আদালতকে আক্রমণ করছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অথবা বিজেপির শীর্ষ
স্তরের কোনও পর্যায় থেকেই এই প্রবণতায় রাশ টানার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন উঠছে, সেটা কি নীরব প্রশ্রয়? কয়েকদিন আগে উপ রাষ্ট্রপতি তথা
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকার সুপ্রিম কোর্টকে আক্রমণ করেছিলেন।
বলেছিলেন, ‘যারা নির্বাচিত নয়, তারা সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে, আইনসভাকে
নির্দেশ দেবে, এটা হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের কোনও দায়বদ্ধতা নেই।
সেটা আছে সরকার অথবা জনপ্রতিনিধিদের।’ ওই মন্তব্য নিয়ে প্রবল ঝড় উঠেছে। তার
মধ্যেই বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে আরও বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
‘ধর্মীয় সংঘাত তৈরির প্ররোচনাদাতা হল সুপ্রিম কোর্ট।’ এই নিয়ে দেশজুড়ে
আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চাপে পড়ে ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নেন বিজেপি
সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। শুধু বলেন, ‘ওই অভিমত দলের নয়।’ সেখানেই শেষ।
নিশিকান্ত দুবেকে সতর্ক করার রাস্তায় হাঁটেননি। কনৌজের প্রাক্তন বিজেপি
এমপি সুব্রত পাঠক, বিহারের বিজেপি এমপি মানন কুমার মিশ্ররা একইভাবে সুপ্রিম
কোর্টকে আক্রমণ করে চলেছেন।
এদিন আইনসভা বনাম বিচার বিভাগের সংঘাত আরও
তীব্র হয় সংবিধানের ৭৫ তম বর্ষ উপলক্ষ্যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত
একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে হাজির হয়ে উপ রাষ্ট্রপতি ফের সুপ্রিম কোর্টকে
টার্গেট করেন। বলেন, ‘জরুরি অবস্থা জারির পর প্রাক্তন এক প্রধানমন্ত্রী
(ইন্দিরা গান্ধী) ১৯৭৭ সালে পরাজিত হয়ে নিজের ভুলের দায় স্বীকার করেছিলেন।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রীরও দায়বদ্ধতা আছে। সেই সময় জরুরি অবস্থা জারির বিপক্ষে
দেশের ন’টি হাইকোর্ট তাদের অভিমত পাঠিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কেন সেই
সুপারিশ অগ্রাহ্য করেছিল? জরুরি অবস্থার পক্ষেই রায় দেওয়া হয়েছিল।’ তাঁর
সাফ কথা, সংবিধানে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়নি, যারা
পার্লামেন্টের উপরে কর্তৃত্ব ফলাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন