কলকাতা: মহাকাশ নিয়ে মানুষের মনে বিস্ময় নিরন্তর৷ আজ থেকে বহু বছর আগে পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল মানুষ। ১৯৫৭ সালে প্রথম মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেয় মানুষের তৈরি প্রথম মহাকাশযান৷ সোভিয়েত রাশিয়ার সেই সাফল্য মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল৷
যদিও মহাকাশ নিয়ে খুঁটিনাটি গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল এরও অনেক আগে। শুধু মহাকাশকে জয় করার লক্ষ্য নিয়েই নয়, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেও মহাকাশকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বিশের দশকে।
সালটা ১৯২৯। তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইউরোপ। যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার গ্রাসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গোটা বিশ্ব৷ সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই যুদ্ধের কাজে মহাকাশকে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়।
শত্রু নিধনে সূর্যকে হাতিয়ার করার কথা ভাবা হয়েছিল। এই ভাবনার বীজ লুকিয়ে ছিল জার্মানিতে। জার্মান পদার্থবিদ হার্মান ওবার্থ সূর্যের তাপকে ব্যবহার করে শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার উপায় বার করেন। সূর্যরশ্মিকে আতশকাচে কেন্দ্রীভূত করে আগুন জ্বালানোর কৌশল অনেকেরই জানা। রোদের মধ্যে একটা কাগজ রেখে তার উপর ছোট আতশকাচ ধরলে কিছু ক্ষণ পর সেই কাগজ জ্বলে ওঠে।
এই পদ্ধতিকেই কাজে লাগিয়েই শত্রুপক্ষের উপর আঘাত হানতে চেয়েছিলেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সূর্যরশ্মির মাধ্যমে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ তৈরির কাজ শুরু করেন স্বয়ং হিটলার। এই অস্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সান গান’ বা ‘সূর্য-বন্দুক’। এই বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে কোনও এক শত্রু নয়, ধূলিস্মাৎ করে দেওয়া যায় আস্ত একটা শহর বা দেশকে।
পদার্থবিদ ওবার্থের পরিকল্পনা ছিল, মহাকাশে একটি স্পেস স্টেশন গড়ে সেখানে বসানো হবে ১০০ মিটার চওড়া একটি আতশকাচ৷ এর জন্য বেছে নেওয়া হবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে নির্দিষ্ট একটি স্থান৷ সূর্যের আলো সেই কাচে প্রতিফলিত হয়ে পড়বে পৃথিবীর একাংশের উপরে। আতশকাচের অভিমুখ থাকবে শত্রুপক্ষের সীমানায় থাকা কোনও শহরের দিকে৷ সূর্যের আলো নির্দিষ্ট শহরটির উপর কেন্দ্রীভূত হলে প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি হবে৷ যা ওই শহরকে পুড়িয়ে দেবে।
পরিকল্পনা ছিল, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ৮ হাজার ২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় এই স্পেস স্টেশন গড়ে তোলা হবে৷ আতশকাচটি থাকবে কমপক্ষে ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে৷ ধাতব সোডিয়াম দ্বারা তৈরি সেই আতশকাচ এতই শক্তিশালী ছিল যে, সমুদ্রের জলও টগবগ করে ফুটে উঠত৷ এই প্রযুক্তির সাহায্যে অনায়াসে জ্বালিয়ে দেওয়া যেত শহরের পর শহর।
তবে ‘সূর্য-বন্দুক’ তৈরির কাজ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। জার্মানরা পরে জানিয়েছিলেন, এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করতে কমকমে ৫০ থেকে ১০০ বছর সময় লাগবে। তাই আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রযুক্তির দুর্বলতায় ব্যর্থ হয় নাৎসিদের পরিকল্পনা৷ অধরা থেকে যায় ‘সূর্য-বন্দুক’৷ চল্লিশের দশকে বিশ্বযুদ্ধের আবহে যদি এই অস্ত্র জার্মানি তৈরি করে ফেলত, তাহলে পৃথিবীর অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে পড়ত৷ এ বিষয়ে একতম বিজ্ঞানীরা৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন