কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলা থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরানোর পর এমন প্রতিক্রিয়া শোনা গিয়েছে তাঁর মুখ থেকে। এটা সুপ্রিম কোর্টের প্রশংসা, নাকি তীব্র কটাক্ষ? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে। আসলে বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর রায় যেভাবে দিয়ে গিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তাতে তাঁকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছিল রাজ্যবাসী। দুর্নীতিহীন প্রশাসন যারা চান তাঁরা প্রত্যেকেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে স্যালুট জানিয়ে থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে যে বিচারপতিকে সামনে দেখতে পেয়ে কেউ তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন, কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ আবার দূর থেকে হাত জোড় করে প্রণাম করছেন। এমনকী বিচারপতির গাড়িকেও প্রণাম করতে দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলা থেকে সরতে হয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলে যে সমস্ত কথা বলেছেন তাতে হতাশার সুর লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাই প্রশ্ন, বাংলা তথা গোটা দেশ যে বিচারপতির 'রাফ অ্যান্ড টাফ' মেজাজ দেখেছে এজলাসের মধ্যে, তা কী আর আগামী দিনে দেখা যাবে না? যদিও বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নন। আগামী দিনেও যে সমস্ত মামলা তিনি শুনবেন তাতে আগের মতোই চেনা মেজাজে নির্দেশ দিতে দেখা যাবে তাঁকে, কার্যত এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।
একজন বিচারক কীভাবে 'পাবলিক ফিগার' হয়ে উঠতে পারেন তা দেখিয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যে তৎপরতার সঙ্গে তিনি দুর্নীতির মামলাগুলি শেষ করে দোষীদের শাস্তি দিতে চেয়েছেন, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। এত দ্রুততার সঙ্গে বিচার পর্ব কাউকে চালিয়ে যেতে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। সেই কারণেই তাঁকে ঘিরে ভরসা পাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতির দুটি মামলা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে হতাশার সুর শোনা যাচ্ছে। বলা ভাল অনেকটাই ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এভাবে তাঁকে দেখতে চান না আমজনতা। এজলাসে বসে একের পর এক কড়া নির্দেশ দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের মুখোশ খুলে দিচ্ছেন তিনি, এই ভূমিকাতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে চায় রাজ্যবাসী। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু যেন থেমে গিয়েছে। যে চেনা ছন্দে পুরো সিস্টেম চলছিল তা হঠাৎ ধাক্কা খেয়েছে। আর তাতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায় হতাশার সুর শোনা যাচ্ছে। এমনটাও বলেছেন রাস্তায় ধর্না দিয়ে বসে থাকা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের হয়ত আমৃত্যু অবস্থান করে যেতে হবে। কতটা দুঃখের সঙ্গে তিনি এমন কথা বলেছেন সেটা বোঝাই যায়। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ফের কলকাতা হাইকোর্টের নিজের এজলাসে বসবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সাময়িক হতাশা কাটিয়ে তিনি আগের মতো চেনা ছন্দে ফিরেছেন কিনা সেটা তখনই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন