কলকাতা: বিচারাধীন বিষয়ে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারের অভিযোগ৷ নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা সরানো হচ্ছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে৷ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, এবার থেকে এই মামলাগুলি শুনবেন কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি৷ শুক্রবার এজলাসে এসে এই বিষয়ে মুখ খুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি বললেন, ‘‘কুণাল ঘোষকে আমার প্রণাম জানাবেন৷ তিনি এতবড় ভবিষ্যৎদ্রষ্টা জানা ছিল না৷’’
শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে অভিষেক সংক্রান্ত মামলাটি সরানোর নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই নির্দেশ আসার পর এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ কলকাতা হাই কোর্টে নিজের এজলাসে এসে বসেন বিচারপতি৷ প্রথমেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি দখতে চান। তার পরেই তোলেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রসঙ্গ। তাঁর নাম উল্লেখ করেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুণাল ঘোষকে আমার প্রণাম জানাবেন। তিনি যা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে। তিনি এত বড় ভবিষ্যৎদ্রষ্টা তা আমার জানা ছিল না। তাঁর বলা সব কথা মিলে গিয়েছে।’’ এ কথা বলার পরেই এজলাস ছেড়ে উঠে যান বিচারপতি।
এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম রায় আসার পর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা নয়, শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রান্ত মামলাটিই (ধৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, রমেশ মালিক, সোমেন নন্দী এই দুটো মামলা তাঁর এজলাস থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন এই মামলাগুলিতে কোনও নির্দেশ দেব না৷ অন্য মামলাও সরাতে বলেছে কি না তা স্পষ্ট না। অর্ডার দেখে বলব৷’’
তিনি আরও বলেন,‘‘সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে টিভি ইন্টারভিউ নিয়ে। স্বচ্ছতার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল এই কোর্টে রিপোর্ট, ইন্টারভিউয়ের তর্জমা, রেজিস্টার জেনারেল, যাবতীয় হলফনামা আজ রাত ১২টার মধ্যে পেশ করুক। রাত সোয়া ১২টা পর্যন্ত আমি আমার চেম্বারে থাকব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে নথিগুলো আজ কোর্টের সামনে পেশ করা হয়েছে, সেগুলো আমি দেখতে চাই। এখনই এই নির্দেশ রেজিস্ট্রার জেনারেল সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে পদক্ষেপ করুক৷’’
২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে৷ কিন্তু, গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে অভিযোগ ওঠে, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা শোনার সময়ই সেই মামলা নিয়ে টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ শোনার পরই প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, একজন বিচারপতি কোনও ভাবেই তাঁদের এজলাসে বিচারাধীন বিষয়ে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। উনি যদি সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন, তা হলে তিনি ওই মামলা শোনার অধিকার হারিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও বিচারপতিকে সেই মামলার দায়িত্ব দিতে হবে। শুক্রবার ঠিক তেমনটাই করা হল৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলা সরানো হল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন