আরামবাগ: গত ছয় মাসে আরামবাগ মহকুমায় ৫১৬ জন সাপের কামড়ে জখম হয়েছে। তাদের প্রফুল্লচন্দ্র সেন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আরামবাগ মহকুমায় সাপের উপদ্রব চিন্তা বাড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সাপের কামড়ে জখমের সংখ্যা চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্যদপ্তরকেও।
আরামবাগ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে ১৩ জন সাপের কামড় খেয়ে আরামবাগ মেডিক্যালে ভর্তি হন। ফেব্রুয়ারি মাসে জখম হন ৬৪ জন। তারমধ্যে একজন ছিলেন শহরের বাসিন্দা। মার্চ মাসে জখম হয়েছিলেন ৫৭ জন। তারমধ্যে শহরের তিনজন। এপ্রিল মাসে জখমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ জন। শহরের দুজন। মে মাসে সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে আরামবাগ মেডিক্যালে ভর্তি হন ১০৭ জন। তারমধ্যে গ্রামীণ এলাকার ১০৭ জন। জুন মাসে ১৯৬ জন আক্রান্ত হন। তারমধ্যে গত মাসেও শহরের ১০ জন বাসিন্দা সাপের কামড়ে জখম হয়েছিলেন। চলতি জুলাই মাসেও অনেকে সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়েছেন। জখমদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে মেদিনীপুরের গড়বেতা থানা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা মারা যান। জুন মাসে আরামবাগ থানার সালেপুরের বাসিন্দা এক তরুণের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। এছাড়া জুলাই মাসেও গোঘাটের এক নাবালক সহ কোতুলপুরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আরামবাগ থানার দক্ষিণ শেখপুরের বাসিন্দা ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা অসীমা জানার মৃত্যু হয়। বাড়িতে রান্নাঘরের সামনে তাঁকে সাপে কামড়ায়। হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরামবাগ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় বলেন, আরামবাগ মহকুমা এলাকায় গত দু’ বছরে সাপের কামড়ে জখমের হার উদ্বেগজনক জায়গাতেই রয়েছে। তবে মৃত্যুর হার কম রয়েছে। দুজনকে কার্যত মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়। তাই বাসিন্দাদের কাছে আমার অনুরোধ, যে কোনও ধরনের কামড় অনুভব হলেই হাসপাতালে আসা উচিত। বেশি দেরি হলে রোগীর চরম পরিণতি হতে পারে। আমরা বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে সচেতন করছি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমার পাশাপাশি বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ও পূর্ব বর্ধমান জেলার একাংশ থেকে প্রায় রোজ চিকিৎসা করাতে আসেন মেডিক্যালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চলতি মরশুমে প্রায় বিভিন্ন দিন গড়ে আট থেকে ১০ জন সাপের কামড়ে জখম হয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সেইজন্য জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জলমগ্ন পরিস্থিতির জন্য মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে। ফলে সাপ নিয়ে বাসিন্দাদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে। তারপরেও অনেকে সাপের কামড়ে জখম হচ্ছেন। জমিতে কাজ করতে গিয়ে চাষিরা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে আবার বাড়িতেও সাপের কামড়ে জখম হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছে বলেও চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন। তাই সাপে কামড়ালে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন