পুরুলিয়া: মাস দুয়েক আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে প্রেমিকার। তারপর থেকেই বিরহে প্রেমিক। মনে রয়ে গিয়েছে প্রেমিকাকে ফিরে পাওয়ার তীব্র বাসনা। এমন সময় ইনস্টাগ্রামে রিল দেখতে দেখতে এক জ্যোতিষীর বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে প্রেমিকের। সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম-ভালোবাসা সহ যে কোনও সমস্যার সমাধান মাত্র ৫৫১ টাকায়! সেই ফাঁদে পড়েই ১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা খোয়ালেন প্রেমিক। এমনিতেই প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ার বেদনা, তারউপর একসঙ্গে এতগুলি টাকা খুইয়ে ওই যুবক একেবারেই মুষড়ে পড়েছেন।
প্রতারিত ওই যুবকের বাড়ি পুরুলিয়া শহর সংলগ্ন বেলগুমা এলাকায়। মঙ্গলবার টামনা থানায় তিনি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পেশায় ফার্মাসিস্ট ওই যুবকের সঙ্গে বছর দুয়েক আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কুচবিহারের এক তরুণীর। যুবকের দাবি, একবার একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে তিনি কুচবিহারে গিয়েছিলেন। সেখানেই তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়। পরস্পরের মধ্যে আলাপ, ফোন নম্বর বিনিময় হয়। তারপর রাতের পর রাত গল্পে মশগুল হয়ে তাঁরা কাটিয়ে দেন। প্রেমের শুরুর দিকে সবকিছু ঠিক থাকলেও দূরত্বের কারণেই সম্পর্কের টানাপোড়েনও চলতে থাকে। মাস দুয়েক আগে অন্য পাত্রের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে যায়।
এই ঘটনার পর থেকেই ওই যুবক মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। গত ১৬ জুন ইনস্টাগ্রামে হঠাৎ করে ওই জ্যোতিষীর বিজ্ঞাপনটি তাঁর চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপনের নীচে দেওয়া হোয়োটসঅ্যাপ নম্বরে তিনি যোগাযোগ করেন। নিজের প্রেমের কথা তিনি বিস্তারিত জানান। নিজের মনস্কামনার কথাও খুলে বলেন। সেই সঙ্গে, স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘টাকা দিতে রাজি আছি, কাজ যেন হয়।’
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর ওই যুবক গত ১৭ জুন ১৯ হাজার ৮০০ টাকা, ১৮ জুন তিন ধাপে ৭৯ হাজার ২০০ টাকা, ১৯ জুন ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং ২১ জুন ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা দেন। সব মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা তিনি ওই জ্যোতিষীকে দেন। যুবকের দাবি, প্রেমিকাকে ফিরে পেতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। সেই কারণেই সাত-পাঁচ না ভেবে দাবিমতো টাকা দিতে থাকেন। টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, অনেকগুলি টাকা দিয়ে দেওয়ার পর তাঁর হুঁশ ফেরে। টাকা ফেরত চাইলে জ্যোতিষী তা দিতে অস্বীকার করে। এরপরই তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এনিয়ে মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে টামনা থানার পুলিস। পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য বারবার প্রচার করা হচ্ছে। তারপরেও বহু শিক্ষিত মানুষ নিজে থেকেই এই ধরনের প্রতারণার চক্করে পা দিচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন