কলকাতা: পরপর চারদিন ব্রেন ডেথের ঘটনা। চারদিনই মস্তিষ্কের মৃত্যুর পর হয়েছে অঙ্গদান। ব্রেন ডেথের পর অঙ্গদান শুরু হওয়ায় বাংলায় এই প্রথম স্থাপিত হল নয়া কীর্তি। ২৭-৩০ জুন— পরপর চারদিন চারটির মধ্যে তিনজন রোগীর ব্রেন ডেথ ঘোষিত হয় পিজি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে। অন্যটি হয়েছে ইএম বাইপাস লাগোয়া একটি নামকরা কর্পোরেট হাসপাতালে। পিজি হাসপাতালের স্টেট অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (সোটো) সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। তাদের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সময়টি অঙ্গদানের ইতিহাসে উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে থাকবে। তাঁর দাবি, পরপর চারদিন অঙ্গদানের নজির বাংলায় নেই।
সূত্রের খবর, যাঁদের অঙ্গদান করা হয়েছে, তাঁরা হলেন যথাক্রমে অভিষেক দলুই (২৩), পাপিয়া কর (৫১), শান্তনু মাজি (২১) এবং শুভঙ্কর মণ্ডল (২১)। অভিষেক, শান্তনু মাজি ও শুভঙ্করের ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়েছে পিজিতে। বাইপাস লাগোয়া এক কর্পোরেট হাসপাতালের ব্রেন ডেথ কমিটি পাপিয়াদেবীর মস্তিষ্কের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করে। এই চারজনের সৌজন্যে ত্বক সহ ২৩টি অঙ্গদান করা হয়েছে। তার মধ্যে আটটি কিডনি, আটটি কর্নিয়া, তিনটি লিভার এবং তিনটি হার্ট রয়েছে। দু’জন ত্বক দান করায় তা শিশু সহ একাধিক অগ্নিদগ্ধ মানুষের স্কিন গ্রাফটিং-এ কাজে আসবে।
সোটো সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পরপর চারদিন অঙ্গদানের ঘটনা রাজ্যে নজিরবিহীন। কিন্তু এখন যত সংখ্যক রোগী অঙ্গ পাওয়ার তালিকায় আছেন, তা সিন্ধুতে বিন্দুও নয়। এখনও পর্যন্ত হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য সুস্থ সবল হৃদযন্ত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন রাজ্যের অন্তত ১২১ জন মানুষ। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য সোটোতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ১৫৫ জন রোগী। কিডনি প্রয়োজন প্রায় ৬৬২ জনের। আর ২৭ জনের সুস্থ লাং প্রয়োজন। সব মিলিয়ে অঙ্গপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৯৬৫ জন। যত দেরি হবে, ততই তাঁদের বাঁচার আশা ক্ষীণ হতে থাকবে। অধিকাংশের পক্ষেই আবার সরকারি পরিকাঠামো ছাড়া প্রতিস্থাপন করা অসম্ভব। বেসরকারি ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ট্রান্সপ্লান্ট তাঁদের কাছে দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত গত ৮ বছরে ১০১টি পরিবার প্রিয়জনের ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর অঙ্গদান করেছেন। মোট ২৭৯টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে। কিন্তু রোগীর চাহিদার তুলনায় তা যৎসামান্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন