কলকাতা: ‘জনগণনার সময় ফর্মে মাতৃভাষা বাংলা লিখলেই বুঝতে হবে তারা বিদেশি।’ সপ্তাহখানেক আগে এই মন্তব্যেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তারপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে যুদ্ধ। ইতিমধ্যেই শুধু অসম নয়, দিল্লি, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা বলার ‘অপরাধে’ আটক করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের। সামনে এসে গিয়েছে বাংলাভাষীদের প্রতি চরম অপমান ও ঘৃণার নির্মম কাহিনি। সেই ইস্যুতে এবার গর্জে উঠলেন বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সাফ জানালেন, বিজেপির বাঙালি বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক রাজনীতি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। লড়াই চলবে। নিজেদের পরিচয়, মাতৃভাষা, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার এই লড়াইতে নির্ভীক নাগরিকদের পাশেই থাকবেন তিনি।
আগামী কাল, সোমবার ২১ জুলাই। ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ। সেই মঞ্চ থেকে আগামীর রণকৌশল ঘোষণা করবেন মমতা। তার দু’দিন আগেই তৃণমূল সুপ্রিমোর সরাসরি বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কয়েকদিন আগেই মাতৃভাষাকে যারা অপমান করছে, তাদের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন মমতা। এবার আরও বৃহত্তর পর্যায়ে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছেন তিনি। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্য, বিজেপি শাসিত অসমে বাঙালি বিদ্বেষের ঘটনা। এদিন সেই প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ‘দেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত দ্বিতীয় কথ্য ভাষা বাংলা। অসমেও তা-ই। সকল ভাষা ও ধর্মকে সম্মান করে যাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেন, শুধু মাতৃভাষার জন্য তাঁদের হুমকি নিপীড়নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এটা শুধু বৈষম্যমূলকই নয়, অসাংবিধানিকও।’ তাই লড়াইয়ের ডাক দিয়ে নেত্রীর আহ্বান, ‘অসমে বিজেপির বিভেদ-রাজনীতি মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। অসমের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলবেনই। নিজেদের ভাষা, নিজেদের পরিচয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই চালানো প্রত্যেক নির্ভীক নাগরিকের পাশে আছি।’
ঘটনাচক্রে এদিনই অসমের একটি ঘটনার ভিডিও সামনে এনেছে তৃণমূল। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ১০০ বছরের প্রাচীন ধুবরি কালীমন্দির ভাঙার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। সকলের দাবি, হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার রাস্তা চওড়া করার অজুহাতে হিন্দু মন্দির ভেঙে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। যে বিজেপি সরকার সনাতনী ধর্ম নিয়ে এত কথা বলে, তারা মানুষের আবেগ ধর্মীয় স্থান নিয়ে খেলা করার সাহস পায় কী করে? বাংলায় কথা বললেই কি অত্যাচারের মাত্রা বাড়াতে হবে? যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা তৃণমূলনেত্রীকে বিঁধেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। বাংলার শাসকদলেরর বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে নিয়ে তোষামোদের রাজনীতি করার অভিযোগও তুলেছেন। বাংলা ও বাঙালির এই আবেগে ভর করেই আগামী কাল ধর্মতলার প্রাঙ্গণে জড়ো হবেন লাখো লাখো তৃণমূল কর্মী। এদিন সকাল থেকেই তাঁরা কলকাতামুখী। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা শহরে এসে পৌঁছেছেন। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ধর্মতলা সংলগ্ন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এদিনের জনসমাগমের হিসেব বলে দিচ্ছে সোমবারের ধর্মতলা যাবতীয় রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন