বিষ্ণুপুর: মনসাপুজোয় নাবালিকা তিন ছাত্রীর ভর আসে। সেই সময় তারা নানা নিদান দেয়। তার জেরে তটস্থ গোটা গ্রাম। আতঙ্কে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তার জেরে গ্রামের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামের বাইরে গেলে বিপদ হবে এমন নিদানের জেরে বড়রাও গ্রাম ছেড়ে বেরতে সাহস পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে বিষ্ণুপুরের ময়রাপুকুরের বাসিন্দাদের সাহস জোগাতে আসরে নামল প্রশাসন। শনিবার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা ওই গ্রামে সচেতনতা শিবির করেন। বিষ্ণুপুরের বিডিও সোমশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ময়রাপুকুর গ্রামে কুসংস্কার ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনার জন্য গ্রামে সচেতনতামূলক শিবির করা হয়েছে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত বলেন, পানশিউলি জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে খবর পাই ময়রাপুকুর গ্রামের তিন ছাত্রীর অলৌকিক কিছু ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সেই জন্য প্রশাসনের পরামর্শে এদিন গ্রামে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ শীর্ষক একটি কর্মশালা করা হয়। ভূত সহ কুসংস্কারের নানা বিষয় তাঁদের হাতে কলমে বোঝানো হয়। আশা করি আতঙ্ক কাটিয়ে পড়ুয়ারা আবার স্কুলে ফিরবে।
ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জ শ্যামাপদ সর্দার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে অধিকাংশ ছাত্রী স্কুলে আসছে না। ভেবেছিলাম চাষের সময় বলে হয়তো স্কুলে আসছে না। শুক্রবার ক্লাস চলাকালীন পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার অভিভাবককে ডেকে পাঠানো হয়। তখনই ছাত্রীদের আতঙ্কের বিষয়টি জানতে পারি। এরপরেই প্রশাসন ও বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতিকে বিষয়টি জানানো হয়। শনিবার ওই গ্রামে একটি সচেতনতা শিবির করা হয়েছে।
এদিন দুপুরে ময়রাপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দারা আতঙ্কিত। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী বাড়িতে রয়েছে। স্কুলে যায়নি। বাসিন্দারাও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাইরে যাচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ দিন আগে গ্রামে মনসাপুজো ছিল। পুজোর সময় একই পরিবারেরই তিন নাবালিকা ছাত্রীর ভর হয়। তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। নিজেদের দেবী বলে জাহির করে। এমনকী কেউ গ্রামের বাইরে গেলে তাঁর বিপদ হবে বলেও নিদান দেয়। তাতেই বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারপর থেকে প্রায় দিনই তাদের ভর আসছে। গ্রামবাসীদের নানারকম নিদান দিচ্ছে। তার জেরে গ্রামের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। গত শুক্রবার স্কুলে ক্লাস চলাকালীন এক ছাত্রী অসুস্থ হওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। শনিবার গ্রামে সচেতনতা শিবির করা হয়।
ময়রাপুকুরের এক গৃহবধূ অর্চনা লোহার বলেন, গ্রামে পরপর অনেকগুলি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া তিন নাবালিকার ভর হওয়ার ঘটনা সকলেই দেখেছেন। তাই আমরা আতঙ্কে রয়েছি। এখন ধান রোয়ার কাজ চলছে। জমিতে কাজ করতে যাচ্ছি। কিন্তু, বিকেলের আগেই ঘরে ফিরে আসছি। আমার মেয়ে ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভয়ে সে স্কুলে যেতে চাইছে না। গ্রামের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও ঘরে বসে রয়েছে।
ময়রাপুকুরে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির শিবির।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন