কলকাতা: ভোররাতে নিউটাউনের ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসন আর সন্ধ্যায় আনন্দপুরের ‘গ্রিনএজ রিজেন্সি’ গেস্ট হাউস—পাটনার হাসপাতালে গ্যাংস্টার খুনের ঘটনায় শনিবার মহানগরীর দুই প্রান্তে যৌথ অভিযান চালাল বিহার ও বেঙ্গল এসটিএফ। পাকড়াও করা হল ১০ জনকে। গোটা ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২১ সালের ৯ জুনের ঘটনাকে। সেবার এই ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনেই এসটিএফের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় পাঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের। এদিন অবশ্য এনকাউন্টার হয়নি। তবে ভোরে সুখবৃষ্টির মতোই সন্ধ্যায় আনন্দপুরের অভিযান ছিল রীতিমতো রোমহর্ষক। বিহার এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ভোরে নিউটাউনের ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনের এম-৭০ এবং এম-৭৩ ব্লকের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জেরা করে গ্যাংয়ের বাকি কয়েকজন সদস্যের মোবাইল নম্বর মেলে। তার সূত্র ধরে ‘গ্রিনএজ রিজেন্সি’ গেস্ট হাউস থেকে এক মহিলা সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে পাটনার পারস হাসপাতালের অপারেশনে অংশ নেওয়া এক শার্প শ্যুটার তৌসিফ ওরফে তৌফিকও রয়েছে।
গত ১৭ জুলাই পাটনার পারস হাসপাতালে গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে খুনের পর প্রতিপক্ষ ওঙ্কারনাথ সিং ওরফে শেরুর গ্যাংয়ের সদস্যরা একটি এসইউভি গাড়িতে চেপে পালিয়েছিল। তারপর গা-ঢাকা দেয় কলকাতায়। সন্দেহ এড়াতে দু’বছর আগে পুলিসের গুলিতে জখম তথা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত দলের এক সদস্যকে অ্যাম্বুলেন্স চাপিয়ে আনা হয়েছিল। আনন্দপুর থানার অন্তর্গত ১২৯৫, মাদুরদহ এলাকার ওই অতিথিশালায় শুক্রবার সন্ধ্যায় এসে ওঠে দুষ্কৃতী দলের সদস্যরা। গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষকে জানায়, জখম আত্মীয়র চিকিৎসার জন্য তারা কলকাতায় এসেছে।
কিন্তু কীভাবে জানা গেল, আনন্দপুরের ওই গেস্ট হাউসে ঘাঁটি গেড়েছে বিহারের দুষ্কৃতীরা? এসটিএফ সূত্রে খবর, পাটনায় অপারেশন সেরে পালানোর সময় যে গাড়ি ব্যবহার করেছিল গ্যাংস্টাররা, তার নম্বর মিলেছিল। গাড়িতে জিপিএস থাকায়, সেটি ট্র্যাক করতে সুবিধা হচ্ছিল। সুখবৃষ্টি অপারেশনের পর ওই গাড়ি ট্র্যাক করে দেখা যায়, সেটি ই এম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুর এলাকায় রয়েছে। পাশাপাশি দুষ্কৃতী দলের দু’জনের মোবাইল টাওয়ার লোকেশনও সেখানে মেলে। এরপর বেঙ্গল এসটিএফের সাহায্য নিয়ে বিকেলে মাদুরদহের ওই গেস্ট হাউসের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বিহার পুলিস। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গেস্ট হাউসে ওঠার পর শহরের এক কলগার্লকে ডেকে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বিকেলে পুলিস পৌঁছনোমাত্র দুষ্কৃতীরা পিস্তল বের করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে। যদিও গুলি চালানোর আগেই তাদের নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিহার এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হরিশকুমার, শচীনকুমার, তৌসিফ ওরফে তৌফিক এবং ইউসুফ খান নামে দুষ্কৃতীদের ওই জখম সঙ্গীকে। জখম ইউসুফকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাকড়াও করা হয় ওই কলগার্লকেও। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে।
বিহার এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দন মিশ্রকে খুনের সুপারি ঘনিষ্ঠ শাগরেদ তৌসিফ রাজাকে দিয়েছিল পুরুলিয়া জেলে বন্দি শেরু। জোগাড় করা হয় ৯ জন শার্প শ্যুটার। কিন্তু গোটা অপারেশনের পরিকল্পনার জন্য বিহার পুলিসের নজর এড়াতে নিউটাউনের ওই আবাসনে দু’মাস আগে দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া করা হয় অভিষেক ও সেতুরাজ নামে দুই ব্যক্তির নামে। পুলিস জানিয়েছে, নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে শেরু গ্যাংয়ের লোকজনকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এহসান নামে তৌসিফের এক শাগরেদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন