গোপীনাথপুর: প্রাইমারি স্কুলের মধ্যেই গড়ে উঠেছে আস্ত ব্যাঙ্ক! মিলছে ঋণ, সাবসিডিও। রয়েছে চেক ফেসিলিটি। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির অস্মি সাঁতরা, ক্যাশিয়ার ক্লাস ওয়ানের ঈশিকা রায়। ব্যাঙ্কের কাজকর্মে সাহায্য করে শিখা, পল্লবীরা। ওই ব্যাঙ্ক খোলা থাকে প্রতিদিন দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত। তারমধ্যেই টাকা জমা দিতে ও তুলতে হয়। অভিনব এই ব্যাঙ্ক খুলেছে গোঘাটের গোপীনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অভিভাবক থেকে শিক্ষা দপ্তর সকলেই।
প্রধান শিক্ষক সুমন নায়েক বলছেন, এই স্কুলে যোগ দেওয়ার পর ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেছি অনেকেই ফর্ম পুরণ করে টাকা তুলতে, জমা করতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে। তখনই বিষয়টি মাথায় আসে। স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের এখন থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করা গেলে তার সুফল পাওয়া যাবে। তার সঙ্গে ব্যাঙ্কের কাজকর্মও অনায়াসে শিখে যাবে তারা। গত কয়েক বছর আগে সেই ভাবনা থেকেই ব্যাঙ্ক খুলে যায়। সাহায্য করছেন অভিভাবকরাও। গোঘাট ২ চক্রের এসআই রাজীব দে বলেন, ব্যাঙ্ক খোলার বিষয়টি প্রশংসনীয়। অন্য স্কুলও এভাবে উদ্যোগী হলে পড়ুয়াদের কাজে লাগবে।
ভাদুর পঞ্চায়েতের জঙ্গলে ঘেরা একটি প্রত্যন্ত গ্রাম গোপীনাথপুর। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৩। অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। গ্রাম থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। গ্রামের কিছু দূরে রয়েছে সিএসপি। এবার সেখানকার খুদেদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ব্যাঙ্ক খুলে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কেউ তাতে দুই টাকা জমা দেয়। কেউ আবার ১০ টাকাও দেয়। তবে ৫০ এর বেশি টাকা জমা দিতে বা তুলতে গেলে লাগবে অভিভাবকের স্বাক্ষর। সেইজন্য ইংরেজিতে লেখা ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট ফর্ম পুরণ করতে হয় পড়ুয়াদের নিজের হাতেই। ব্যাঙ্কের লেনদেনের পর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের পাশবুকে তা এন্ট্রি করতে হয়। নির্দিষ্ট রেজিস্টারেও হিসেব রাখে পড়ুয়ারাই। তাতে সাহায্য করেন স্কুলের দুই সহ শিক্ষক-শিক্ষিকা জয়দেব রায়, চন্দনা পণ্ডিত রায়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রত্যেক বছর স্কুলেই আয়োজন করা হয় বইমেলা। সেখানে বই কিনতে নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকেই তুলতে হয় টাকা। কম পড়লে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু তা নির্দিষ্ট সময়ে শোধ করতে হয়। এছাড়া খাতা, পেন্সিল সহ স্টেশনারি সামগ্রীও কেনা যায় স্কুলের থেকেই। সেসবের দাম থেকে পাওয়া যায় সাবসিডি। অভিনব এই ব্যাঙ্কে এখন জমেছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। ৫১৯ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ জমিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ঋজু রায়। হাই স্কুলে যাওয়ার আগে পড়ুয়াদের সত্যিকারের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খুদেদের মায়েরা পূজা রায়, মমতা রায়, মানসী রায়রা বলছেন, বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এলে ছেলেমেয়েদের হাতে টাকা দেয়। আমরাও দিয়ে থাকি। কিন্তু ওই টাকায় তারা অনেক সময় বাইরের খাবার খেয়ে নেয়। এখন ওই টাকা স্কুলেই জমাচ্ছে। নিজেদের পড়াশোনার প্রয়োজনেই আবার তা ব্যবহার করছে।এই ব্যবস্থাটি ভালো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন