‘কাউকে বললে সুন্দর মুখ অ্যাসিড ছুড়ে জ্বালিয়ে দেব’, হুমকি দিয়েছিল মনোজিৎ - Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Breaking

Aaj Bikel News | Latest Bengali News Bangla News, বাংলা খবর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, তৃণমূল, বিজেপি খবর

Aaj Bikel is currently West Bengal's leading, popular, authentic and trustworthy digital media. Aaj Bikel News has become the voice of crores of readers and viewers.

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫

‘কাউকে বললে সুন্দর মুখ অ্যাসিড ছুড়ে জ্বালিয়ে দেব’, হুমকি দিয়েছিল মনোজিৎ



কলকাতা: ‘কলেজে ভর্তি হয়ে প্রথমবার পিকনিক। বজবজের একটা বাগানবাড়িতে। খুব এক্সাইটেড ছিলাম। দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি, ওই পিকনিকে গিয়ে এমন হাড়হিম অভিজ্ঞতা হবে। এক সিনিয়র দিদি না বাঁচালে কসবার ঘটনা হয়তো সেদিন বজবজেই হতো। আমাকেই ধর্ষণ করত মনোজিৎ।’  

সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের ত্রাস মনোজিৎ মিশ্র। একের পর এক ‘ঘটনা’। অকথ্য নির্যাতন। অপেক্ষা ছিল একটি মাত্র স্ফূলিঙ্গের। একটি অভিযোগের। ২৫ জুন কলেজের গার্ড রুমে নির্যাতিতা তরুণীর সেই অভিযোগই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মনোজিতের আতঙ্কের সাম্রাজ্যে। এখন উপুড় হয়ে যাচ্ছে তার নির্যাতনের ঝুলি। এগিয়ে আসছেন মনোজিতের লালসার শিকার হওয়া ছাত্রীরা। প্রাক্তনীরাও। এদিন ‘এমএম’-এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটনানো ছাত্রী কুনজরে পড়েছিলেন ২০২৩ সালে। সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বারবার কেঁপে উঠছিলেন। আতঙ্ক এখনও গ্রাস করে রয়েছে তাঁকে। ছাত্রীর কথায়, ‘শারীরিক নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাউকে বলতে পারিনি। হুমকি দিয়েছিল শয়তানটা। বলেছিল, কাউকে এই ঘটনার কথা বললেই সুন্দর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে জ্বালিয়ে দেব। পরিবারের ক্ষতি করারও ভয় দেখায়’। 

কী হয়েছিল দু’বছর আগে বজবজের বাগানবাড়িতে? নির্যাতিতা বলেন, ‘বাগানবাড়িতে দুটো ঘর ছিল। একটা ছেলেদের, আর একটা মেয়েদের জন্য বরাদ্দ হয়। মনোজিৎও ছিল। দুপুরে খাওয়ার পরই ছেলেরা মদের আসর বসায় ঘরের বাইরে। প্রচণ্ড জোরে বক্স বাজছিল। তখনই বাবা ফোন করেন। শুনতে পাচ্ছিলাম না কিছু। তাই ছেলেদের ঘরে যাই। আমাকে ফলো করছিল মনোজিৎ। আচমকাই পিছন থেকে জাপটে ধরে। মদ্যপ অবস্থায় আমাকে অশ্লীলভাবে স্পর্শ করতে থাকে ও...’। বলেই শিউরে উঠলেন ছাত্রী। কিছুটা শ্বাস টেনে জানালেন, ‘দরজাটা লক করে ও আমার ফোনটা কেড়ে নেয়। বলেছিলাম, বেরতে দাও আমাকে। ছাড়েনি আমায়। জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয়। নিস্তার পাওয়ার জন্য পা পর্যন্ত ধরেছিলাম। বলেছিল, কালীঘাটে আমার ১০ কাঠা জমি আছে। তোর নামে লিখে দেব, একবার সুযোগ দে। কোনওভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে এক সিনিয়র দিদিকে বলি। তিনিই সরিয়ে নিয়ে যান আমাকে। বাড়ি ফেরার পথে বাসেও অশ্লীলভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করে মনোজিৎ।’ কলকাতায় ফিরে তরুণী ভেবেছিলেন থানায় অভিযোগ করবেন। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আলোচনাও করেন। ‘দাদা’র ভয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে ছাত্রীর বন্ধুরাই। মনোজিৎকে জানিয়ে দেয় তারা। এরপরে ফের মনোজিৎ বাহিনীর কোপে পড়েন তরুণী। তাঁর কথায়, ‘মনোজিৎ বলেছিল, তোর বাবা-মা-ভাইকে খুন করে দেব।’ এই কথা শুনে আর কোথাও মুখ খুলতে পারেননি আতঙ্কিত ছাত্রী। 

শেষ পাঁচ বছরে কলেজে রীতিমতো ত্রাসের সাম্রাজ্য তৈরি করেছিল মনোজিৎ। পুলিসি জেরায় অন্য দুই অভিযুক্ত প্রমিত ও জায়িব জানিয়েছে, গার্ড রুম কিংবা গেস্ট হাউসে নিয়ে গিয়ে ‘পছন্দে’র মেয়েদের ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করত ‘দাদা’। বাধা দিলে চলত জবরদস্তি। অত্যাচার। তারপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিত বিভিন্ন মাধ্যমে। সেই ছাত্রী হাতে-পায়ে ধরলে শুরু হতো ব্ল্যাকমেল। অসহায়তার সুযোগ নেওয়া। এভাবে অন্তত দশজন ছাত্রীর ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছিল মনোজিৎ বাহিনী। টোপ দেওয়া হতো, আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেব। ২০২১ থেকে মনোজিতের প্রভাব লাগামছাড়া হয়ে যায়। কেউ ছিল না তাকে থামানোর। ইউনিয়ন রুমে রীতিমতো সালিশি সভা বসাত ‘এমএম’। তার কথা না মানলে ছাত্রীদের সিগারেটের ছেঁকাও দেওয়া হতো বলে জানিয়েছে প্রমিত-জায়িব। পাশে রাখা থাকত লাঠি, হকি স্টিক। অমান্য করলে আছড়ে পড়ত বেধড়ক মার। মেয়েদের জামা-কাপড় খুলে পেটানো হতো বলে পুলিস সূত্রে জানানো হয়েছে। কোনও ছাত্রীই মনোজিতের টার্গেটের বাইরে ছিল না। তাদের অনেকেই মঙ্গলবার জমায়েত করেন কলেজের বাইরে। তাঁদের একটাই দাবি—বিচার চাই। কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মহিলাদের সঙ্গে এই অনাচার, নির্যাতন থেকে চিরতরে মুক্তির দাবিতে টাকা দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান বর্তমান ছাত্রীরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Loading...