জলপাইগুড়ি: রাতের অন্ধকারে ডুয়ার্সের ফাঁকা রাস্তার ধারে দাঁড় করানো তৃণমূল নেতার গাড়িতে বসে মদ্যপানের পার্টি! ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও স্ব-মেজাজে ছিলেন জলপাইগুড়ির বিজেপি নেত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরেও তিনি বলেন, ‘কে, কী বলছেন, জানি না। যা জানানোর দলকে জানিয়েছি। দল আমার পাশেই আছে।’ যদিও রাতেই ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করে বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, ওই বিজেপি নেত্রীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যদিও এবিষয়ে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গের কনভেনর দীপক বর্মন বলেন, ‘ওই নেত্রী দলের মহিলা মোর্চার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে, ঘটনায় জড়িত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসকদলও কড়া পদক্ষেপ করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
এদিন দুপুরে বিজেপির মহিলা মোর্চার ওই নেত্রীর দাবি, ‘আমি চক্রান্তের শিকার।’ এদিকে, ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়া তৃণমূলের জনপ্রতিনিধির মুখেও চক্রান্তের অভিযোগ। তবে কারা সেই চক্রান্ত করল, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তিনি। ঘটনায় নাম জড়ানো তৃণমূল নেতা দলের পুরনো দিনের কর্মী। তাছাড়া তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। ফলে বিষয়টি দল মোটেই ভালোভাবে নেয়নি। দলের জেলা নেতৃত্ব তাঁর কাছে গোটা বিষয়টি তো জানতে চেয়েইছে, রাজ্য নেতৃত্বের তরফেও ঘটনাটি জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই তৃণমূল নেতা বলেন, ‘দলের জেলা নেতৃত্ব ভাইরাল হওয়া ভিডিও আমাকে পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চেয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি দুঃখপ্রকাশ করেছি। এমনটা আর কখনও হবে না বলে জানিয়েছি।’ যদিও ওই নেতার দাবি, ‘যেভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হচ্ছে, আদৌও তেমন নয়। ওই বিজেপি নেত্রী আমার এলাকার বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম মাত্র।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে (সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান) দেখা গিয়েছে, বিজেপি নেত্রী কাচ তোলা বিলাসবহুল গাড়ির পিছনের সিটে পা তুলে বসে রয়েছেন। আর তাঁর সামনে গ্লাসে মদ রাখা। এলাকার বাসিন্দারা প্রশ্ন করাই ওই নেত্রী পাল্টা ধমকের সুরে বলছেন, ‘কেন, কী অসুবিধা? আমরা একসঙ্গে বসতেই পারি। একশোবার বসতে পারি।’ যদিও এদিন সুর বদলে তাঁর দাবি, ‘আমি গজলডোবা দশ নম্বর কলোনি থেকে পার্টির মিটিং করে ফিরছিলাম। পথে ওই তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আমার গাড়ি সামনে ছিল। তৃণমূল নেতার গাড়ি ছিল পিছনে। এলাকার লোকজন ধমক দিয়ে আমাকে ওই তৃণমূল নেতার গাড়িতে বসতে বাধ্য করে। ওই গাড়িতে যে মদের গ্লাস রাখা আছে, জানতাম না।’ যদিও ওই তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর কী এমন সম্পর্ক যে, রাত ১১টার সময় জঙ্গলের ধারে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে ‘গল্প’ করতে হচ্ছিল? প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি নেত্রীর বক্তব্য, ‘অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসতে চাইছেন। তাছাড়া কাজের বিষয়ও রয়েছে। সেকারণে অনেকেই বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান। ওই নেতার সঙ্গেও তেমনই সম্পর্ক।’ তাঁর দাবি, ‘বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব হয়েছি আমি। এটা আমার দলের নেতৃত্ব জানে। তারাই চক্রান্ত করে আমায় ফাঁসিয়েছে। এর পিছনে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।’ যদিও এদিন রাতে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই ওই বিজেপি নেত্রী আর ফোন ধরেননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন