পাটনা: গেরুয়া শিবিরের প্রধান ভোটব্যাঙ্ক উচ্চবর্ণরা। ওবিসিদের জন্য নীতীশ কুমার রয়েছেনই। কিন্তু দলিত? বিহারে মোট ভোটার সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই তো তারা। তাদের সমর্থন পেতে বিহারে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (রামবিলাস), জিতন রাম মাঝির হামের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিজেপি। নিজেদের গা থেকে দলিতবিরোধী তকমা ঘোচানোর মোদি-শাহের দল মরিয়া চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তাতে ফল হয়েছে বিপরীত। দলিত ভোটের বড় অংশই ঝুঁকে পড়েছে আরজেডি-কংগ্রেস ও বামেদের জোট মহাগঠবন্ধনের দিকে। গত বিধানসভা ভোট থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই প্রবণতা। সেই ‘অপরাধে’ই কি এবার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের (এসআইআর) আড়ালে কোপ বসছে দলিতদের উপর? অন্তত তেমনই অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের দাবি, বিরোধীরা যে সব কেন্দ্রে শক্তিশালী, সেই সব কেন্দ্রকে বাছাই করে কোপ দেওয়া হচ্ছে ভোটব্যাঙ্কে। আর এই ভোটব্যাঙ্ক কারা? মুসলিম এবং দলিত। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই অভিযোগই বদ্ধমূল হতে শুরু করেছে। কারণ, সমীক্ষা রিপোর্টটি বলছে, ইন্টেনসিভ রিভিশনের পর ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে বিহারের ৭১ শতাংশ দলিত। এমনকী ২৭ শতাংশ দলিত ভোটার তো এও জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের উপর তাঁদের আস্থাই নেই!
সামনেই বিধানসভা ভোট বিহারে। তার আগে চলছে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)। সেই প্রক্রিয়া ঘিরে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এসআইআরের আড়ালে বৈধ ভোটারদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীরা। সেই আশঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে ন্যাশনাল কনফেডারেশন অব দলিত অ্যান্ড আদিবাসী অর্গানাইজেশনস (এনএসিডিএওআর) নামে একটি সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষা। গত ১০ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে ১৮ হাজার ৩৮১ জন দলিত ভোটারের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা চলাকালীনই এসআইআর শুরুর ঘোষণা করেছিল কমিশন। সেই ঘোষণার পর সাড়ে ৮ হাজার দলিতকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা কি নতুন ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা করছেন? তাঁদের মধ্যে ৭১ শতাংশই এব্যাপারে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। আর ৫ শতাংশ ভোটার বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সমীক্ষায় আরও দেখা যাচ্ছে, দলিত ভোটারদের ৫৮ শতাংশই মনে করেন, বিহারের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বেকারত্বই সবচেয়ে বড় ইস্যু। আবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘পারফরম্যান্স’ নিয়েও খুশি নন ৪৮ শতাংশ দলিত ভোটার। বিহারে জাতগণনা হবে। সেব্যাপারে ৩৩ শতাংশ দলিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। একাজের জন্য রাহুল গান্ধীকে প্রশংসা করেছেন ৩০ শতাংশ। এই তুল্যমূল্য মতামত বিরোধী শিবিরের পাল্লা ভারী করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সত্যিই যদি কেন্দ্র ‘বাছাই’ করে দলিতদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়, তাহলে ভোটে বাড়তি সুবিধা কার? গেরুয়া রাজনীতির দিকে কিন্তু আঙুল তুলেই রেখেছে বিরোধীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন