রামপুরহাট: তারাপীঠের হোটেলে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে মহিলা পর্যটকের স্নানের দৃশ্য ভিডিও রেকর্ড করার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল মূল অভিযুক্তকে। প্রায় তিনমাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকার পর মঙ্গলবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাড়িতে ফিরতেই পুলিস তাকে ধরে ফেলে। বুধবার ধৃতকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল কলকাতার দু’টি পরিবার তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। তাঁরা দ্বারকা ব্রিজের পূর্বপাড়ের রামপুরহাট থানা এলাকার একটি হোটেল ভাড়া নেন। পরের দিন রাত ৯টা নাগাদ তাঁদেরই এক বছর বত্রিশের মহিলা পর্যটক বাথরুমে স্নান করছিলেন। হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ে, বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে কেউ তাঁকে দেখছে। সে মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করছে। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। অভিযোগ, সেই সময় হোটেলের ওই কর্মীকে পালাতে সাহায্য করেন ম্যানেজার অভিজিৎ রায় ও রিসেপসনিস্ট শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহিলার পরিবার।
পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে, পাশাপাশি দু’টি রুমের দু’টি রাথরুমও পাশাপাশি। দুই বাথরুমের মাঝের দেওয়ালের উপরে একটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। ওই মহিলা পর্যটকের পাশের রুমটি খালি ছিল। হোটেলের কর্মী সুদীপ্ত সেই রুমে ঢুকে চেয়ার লাগিয়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে ওই মহিলার স্নানের দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে রেকর্ড করছিল। হোটেলের ম্যানেজার ও রিসেপসনিস্টকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। এই ঘটনায় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
মহিলার আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, রাথরুমের যে জায়গা থেকে ভিডিও রেকর্ড করা হচ্ছিল, সেই প্রমাণ নষ্ট করার জন্য সিমেন্ট দিয়ে গাঁথনি দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এখান থেকেই প্রমাণিত, এটা কোনও ছোট র্যাকেট নয়, এর পিছনে বড় র্যাকেট রয়েছে। এর আগেও অনেকের এই গোপনস্থান দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করা হয়ে থাকতে পারে। এই ধরনের ভিডিও চড়া দামে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। এর মধ্যে বিদেশি যোগ থাকতে পারে। যদি প্রমাণগুলি সংরক্ষিত রাখতে হয়, তাহলে পুলিস প্রশাসনের উচিত দ্রুত ওই হোটেল সিল করে দেওয়া। পরে বিচারকের নির্দেশে হোটেলের ওই দু’টি রুম সিল করে দেওয়া হয়।
এরপরই মূল অভিযুক্ত সুদীপ্তর খোঁজ তার বাড়ি যায় পুলিস। যদিও তার হদিশ পায়নি। তাকে ধরতে তক্কে তক্কে ছিল তদন্তকারীরা। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে সুদীপ্ত বাড়ি ফিরতেই পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতকে জেরা করে ওই ভিডিও উদ্ধারের পাশাপাশি কী উদ্দেশ্যে সে এমন ভিডিও রেকডিং করেছিল তা জানার চেষ্টা করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন