পুরী: বিশৃঙ্খলা-অব্যবস্থা চরমে। তারই মাশুল গুনতে হল পুরীর ‘ঐতিহ্য’ রথযাত্রায় আগত পুণ্যার্থীদের। আতঙ্ক সঙ্গী হয়েছিল রথযাত্রার দিন থেকে। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভিড়ের চাপে সেদিনও পদপিষ্টের পরিস্থিতি দেখা দেয়। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় অন্তত ৬০০ জনকে। কপালজোরে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে এল সেই আতঙ্ক। এবার প্রাণঘাতী হয়ে। রবিবার কাকভোরে জগন্নাথদেবের ‘মাসির বাড়ি’ গুণ্ডিচা মন্দির চত্বরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তিনজনের। মৃতদের মধ্যে দু’জনই মহিলা। জখম আরও ৫০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছ’জনকে পুরীর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পরে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন বহু মানুষ। ওড়িশার বিজেপি প্রশাসনের বিরুদ্ধেই অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এপর্যায়ে পৌঁছয় যে, ‘ক্ষমা’ চাইতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশও দেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলি করা হয় জেলাশাসক সিদ্ধার্থশঙ্কর সোয়াইন এবং পুলিস সুপার বিনীত আগরওয়ালকে। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ডিসিপি বিষ্ণু পতি এবং কমান্ড্যান্ট অজয় পাধিকেও সাসপেন্ড করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে এককালীন ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার ভিড়ের চাপে রাস্তায় আটকে যায় বলরামের রথ ‘তালধ্বজ’। পিছনে থাকা দেবী সুভদ্রা, জগন্নাথদেবের রথ এগতে পারেনি। শনিবার বিপুল ভিড় ঠেলে ‘মাসির বাড়ি’ এসে পৌঁছয় তিনটি রথ। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর যেতে এবছর কিছুটা বেশি সময় লাগে। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ গুণ্ডিচা মন্দিরে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিলেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। নিয়মমাফিক ‘পাহুদা’ উপলক্ষ্যে খুলে দেওয়া হয় রথের আচ্ছাদন। একটি সূত্রের খবর, রথে আসীন অবস্থায় মূর্তিগুলিকে দেখতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যে। আর তার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তিনজনের। অন্য একটি সূত্র আবার জানাচ্ছে, উল্টোরথের জন্য দু’টি ট্রাকে করে সামগ্রী আনা হচ্ছিল। জগন্নাথদেবের রথ ‘নান্দীঘোষে’র কাছে সেগুলি এসে পৌঁছতেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। তারই পরিণতি এই মর্মান্তিক ঘটনা।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেরি হওয়ায় ‘আদপ মণ্ডপ বিজে’ অনুষ্ঠান রবিবার পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তারই অঙ্গ ‘পাহুদা’। এক আধিকারিক বলেন, ‘রাতে সাধারণত পাহুদা অনুষ্ঠিত হয় না। তবে রবিবার ভোরে রথে আসীন দেবদেবীকে দর্শনের সুযোগ পেতে সকলেই রথের কাছে যেতে চান। আর তাতেই নিরাপত্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।’ ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘রথযাত্রার দিনের ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অব্যবস্থার পর রবিবারের এই ঘটনা সামনে এল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন