কলকাতা: ‘আমার ক্ষমতা কী, সবাই জানত। ওই মেয়েটাও...। আগে এমন বহু কেস করেছি। কিন্তু মেয়েটা কমপ্লেন করে দেবে, ভাবতে পারিনি। গুরুত্ব দিইনি।’ পুলিসি জেরায় এই স্বীকারোক্তি মনোজিৎ মিশ্রের। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের প্রাক্তনী, তৃণমূল ছাত্র নেতা, আইনজীবী, পড়ুয়ামহলের কাছে আতঙ্কের ‘দাদা’ এবং গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। আর তাঁরই স্বীকারোক্তি, ‘ধর্ষণ করেছি। প্রমিত আর জায়িব ভিডিও করেছে।’ সেই ভিডিওই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের ‘নিজস্ব’ গ্রুপে। দেখানো হয়েছিল নির্যাতিতাকেও। ভয় দেখানোর জন্য। যাতে তিনি মুখ না খোলেন। কিন্তু আগের সব ঘটনার মতো এবার আর ম্যানেজ হয়নি। আশঙ্কা একটা ছিলই। তাই শাগরেদদের নামিয়েছিল মনোজিৎ খোঁজ নেওয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার খবর আসে, অভিযোগ দায়ের করে ফেলেছেন নির্যাতিতা।
খাস কলকাতায় কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের অভিযোগ তোলপাড় ফেলেছে গোটা রাজ্যে। গঠিত হওয়া বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) সদস্য সংখ্যা রবিবার বাড়িয়ে ন’জন করেছে কলকাতা পুলিস। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছে মনোজিতের ‘ক্ষমতায়ন’। পুলিসকে সে জেরায় সাফ জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই তরুণীকে সহবাসের জন্য জোরাজুরি করছিল সে। কিন্তু নির্যাতিতা রাজি হননি। তখনই মনোজিৎ ঠিক করে নেয়, অনেক হয়েছে। এবার হেস্তনেস্ত। ২৫ জুন।
চেষ্টা করেছিল মনোজিৎ। নানাভাবে। ফোন করেছিল তার এক পরিচিত ‘নেতা’কে। আগে বহুবার সেই নেতা ‘বিপদ থেকে উদ্ধার’ করেছিলেন তাকে। কিন্তু এবার সবটা শুনলেও আর সাড়া আসেনি নেতার দিক থেকে। তখনই মনোজিৎ বুঝে যায়, পরিস্থিতি কঠিন। প্রথমে ফোনে শাসানো হয় নির্যাতিতাকে। সেই প্রমাণ পেয়েছে পুলিস। এরপর গ্রুপ থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেয় মনোজিৎ। প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং জায়িব আহমেদকেও বলে, ‘ফোন থেকে সব প্রমাণ মুছে দে।’ তাতেও অবশ্য লাভ হয়নি। অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা। আর পুলিস তদন্তে যত এগচ্ছে, পরতে পরতে সামনে আসছে মনোজিতের আতঙ্ক। কারণ সে জেরায় আরও জানিয়েছে, গার্ড রুমে এই প্রথম নয়। আগে বহুবার এই অকুস্থলই বেছে নিয়েছিল সে। কারণ, ওখানে সিসি ক্যামেরা বসানো নেই। তদন্তে নেমে এমনই এক নির্যাতিতার খোঁজ পেয়েছে সিট। মনোজিতের লালসার শিকার হয়েছিলেন তিনিও। আইনজীবী ‘দাদা’র কর্মকাণ্ডের এখানেই শেষ নয়। ২০২২ সালে কালীঘাট এলাকায় একটি ধর্ষণের ঘটনায় সে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ২৪টি মামলা। ২০১৩ সালে ইউনিয়নের ‘ক্ষমতা’য় আসার পর থেকেই বেড়েছে তার স্পর্ধা। দাপট। প্রভাব।
এত স্পর্ধা মনোজিৎ পেল কোথা থেকে? সূত্রের দাবি, সবমিলিয়ে মনোজিতের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিসেই মোট ২৪টি মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে শ্যামাপ্রসাদ কলেজে পাস কোর্স থেকে অনার্সে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় এফআইআর হয়। গত বছর কসবা থানা এলাকায় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও চলতি বছরের মার্চে দুই আইনজীবী গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক অভিযুক্তকে ছাড়াতে যায় মনোজিৎ। ধৃতকে ছাড়তে রাজি হয়নি পুলিস। অভিযোগ, কসবা থানায় ঢুকে পুলিসকে হুমকি ও সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় মনোজিতের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছিল। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে মনোজিৎ। কিন্তু ‘জামিনের বন্দোবস্ত’ করে নিয়েছে প্রত্যেকবারই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন